যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি তাদের কনভেনশন শেষ করার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। উভয় দলই আশা করেছিল এই কনভেনশনের ফলে তাদের প্রার্থী অল্প-বিস্তর বাড়তি সমর্থন আদায় করতে পারবেন। বাস্তবে তা ঘটেনি। উভয় প্রার্থীই জনসমর্থনে সম্মেলনের আগে যেখানে ছিলেন, সম্মেলনের পরও কার্যত সেখানেই রয়ে গেছেন।
সর্বশেষ জাতীয় জনমত জরিপ অনুসারে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন এখনো রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় স্বস্তিজনক দূরত্ব বজায় রাখছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের নেওয়া এই জরিপে সম্মেলন-পরবর্তী বাইডেনের জনসমর্থন ৪৭ শতাংশ এবং ট্রাম্পের ৪০ শতাংশ। একাধিক জরিপে অবশ্য তাঁদের ব্যবধান কমে আসছে বলে জানানো হয়েছে।
জনমতে এগিয়ে থাকা বাইডেনের জন্য স্বস্তির কথা হলেও দেশজুড়ে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অব্যাহত বিক্ষোভ তাঁর জন্য শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নির্বাচনে ট্রাম্প নিজেকে ‘আইন ও শৃঙ্খলার প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছেন। তিনি বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক পার্টিকে চলতি অশান্ত অবস্থা, যাকে তিনি অরাজকতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তার জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করেছেন। ট্রাম্প বলছেন, বাইডেন ক্ষমতায় এলে আমেরিকা আর আমেরিকা থাকবে না, জাহান্নামে পরিণত হবে।
শহরতলিতে নিম্ন আয়ের, অর্থাৎ কালো মানুষদের অবাধ আগমনের ফলে তা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। একমাত্র তিনিই পারেন এই অবস্থা সামাল দিতে, ট্রাম্পের এই বার্তা অল্প-বিস্তর ফল দিতে শুরু করেছে। ঠিক কীভাবে এই কথার মোক্ষম জবাব দেবেন, বাইডেন তা এখনো ঠাওর করে উঠতে পারেননি।
একাধিক জনমত জরিপ অনুসারে, পুলিশের হাতে আফ্রিকান–আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। দুই মাস পর সেই সমর্থন ৪৯ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই আন্দোলনের একটি মুখ্য দাবি ছিল, পুলিশ প্রশাসনের বাজেট হয় বাতিল নয়তো হ্রাস করতে হবে। ট্রাম্প এই ‘বাতিল’ আন্দোলনকে বাইডেনের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন। শহরতলির শ্বেতকায় নারী–পুরুষ অধিকাংশই কঠোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষে। মুখে সমানাধিকারের কথা বললেও নিজ পাড়ায় তাঁরা কেউই নিম্ন আয়ের কালো অথবা বাদামি মানুষদের দেখতে চান না।
দলীয় কনভেনশনে ডেমোক্র্যাটরা নিজেদের কালো ও বাদামি মানুষদের অধিকারের বড় ‘চ্যাম্পিয়ন’ প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। দুই মাস আগে এই রণকৌশল কার্যকর মনে হলেও এখন আর তা মনে হচ্ছে না। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন হ্রাস সে কথার প্রমাণ। দুই মাসের অধিক সময় ধরে ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ চলছে। গত সপ্তাহে উইসকনসিনের কেনোশাতে পুলিশের গুলিতে আরও একজন কালো মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় সেখানেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুটি অঙ্গরাজ্যই ডেমোক্রেটিক পার্টির নিয়ন্ত্রণে। ট্রাম্প যুক্তি দেখাচ্ছেন, ডেমোক্র্যাটদের হাতে আমেরিকার কোনো রাজ্যই নিরাপদ নয়।
ট্রাম্পের অব্যাহত সমালোচনার মুখে বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক পার্টিকে নতুন রণকৌশলের কথা ভাবতে হচ্ছে। এই রণকৌশলের অংশ হিসেবেই বাইডেন এখন বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার সমালোচনা করা শুরু করেছেন। তবে এ ব্যাপারে তাঁকে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে, কারণ ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাব্য বিজয়ের একটি বড় অস্ত্র আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন। তাঁদের কোনোভাবেই চটানো যাবে না। পোর্টল্যান্ড ও উইসকনসিনে বর্ণভিত্তিক দাঙ্গার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন বাইডেন। গত রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ট্রাম্প একদিকে ঘৃণা ও বিভক্তির বিষ ছড়াচ্ছেন, অন্যদিকে সহিংসতাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। একই বিবৃতিতে তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি আঙুল না তুলেও কঠোর ভাষায় সহিংস ঘটনার নিন্দা করেছেন। বাইডেন বলেছেন, ‘পোর্টল্যান্ডে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি তীব্রভাবে এই সহিংসতার নিন্দা করি। বাম বা ডান, যেদিক থেকেই এই সহিংসতা আসুক না কেন, আমি তার নিন্দা করি।’
দৃশ্যত, অন্য সব বিষয় ছাপিয়ে অব্যাহত বর্ণ দাঙ্গা উভয় দলের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প শিবির মনে করছে, করোনাভাইরাস ও অব্যাহত অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা থেকে নজর সরিয়ে নেওয়ার জন্য ‘আইন ও শৃঙ্খলা’ ইস্যুটি তাদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি করবে। এই বিবেচনা থেকে তারা বারবারই বলছে, ‘বাইডেন ক্ষমতায় এলে আমরা নিরাপদ থাকব না।’ বলাই বাহুল্য, ট্রাম্পের এই বার্তার লক্ষ্য শ্বেত আমেরিকা, বিশেষত শহরতলির শিক্ষিত শ্বেতকায় নারী। আগামী নির্বাচনে এঁদের ভোটই নির্ধারণ করবে কে হবে আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
বাইডেনের জন্য আরেক সমস্যা, তাঁর ব্যাপারে মার্কিন ভোটারদের তুলনামূলক অনুৎসাহ। রিপাবলিকান সমর্থকেরা ট্রাম্পের প্রতি যতটা উৎসাহী, ডেমোক্রেটিক ভোটাররা বাইডেনের প্রতি ততটা নন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘এন্থুজিয়াজম গ্যাপ’।
ট্রাম্পের অব্যাহত সমালোচনার মুখে বাইডেন ও ডেমোক্রেটিক পার্টিকে নতুন রণকৌশলের কথা ভাবতে হচ্ছে। এই রণকৌশলের অংশ হিসেবেই বাইডেন এখন বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতার সমালোচনা করা শুরু করেছেন। তবে এ ব্যাপারে তাঁকে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে, কারণ ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাব্য বিজয়ের একটি বড় অস্ত্র আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন। তাঁদের কোনোভাবেই চটানো যাবে না। পোর্টল্যান্ড ও উইসকনসিনে বর্ণভিত্তিক দাঙ্গার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন বাইডেন। গত রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ট্রাম্প একদিকে ঘৃণা ও বিভক্তির বিষ ছড়াচ্ছেন, অন্যদিকে সহিংসতাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। একই বিবৃতিতে তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি আঙুল না তুলেও কঠোর ভাষায় সহিংস ঘটনার নিন্দা করেছেন। বাইডেন বলেছেন, ‘পোর্টল্যান্ডে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি তীব্রভাবে এই সহিংসতার নিন্দা করি। বাম বা ডান, যেদিক থেকেই এই সহিংসতা আসুক না কেন, আমি তার নিন্দা করি।’
দৃশ্যত, অন্য সব বিষয় ছাপিয়ে অব্যাহত বর্ণ দাঙ্গা উভয় দলের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প শিবির মনে করছে, করোনাভাইরাস ও অব্যাহত অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা থেকে নজর সরিয়ে নেওয়ার জন্য ‘আইন ও শৃঙ্খলা’ ইস্যুটি তাদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি করবে। এই বিবেচনা থেকে তারা বারবারই বলছে, ‘বাইডেন ক্ষমতায় এলে আমরা নিরাপদ থাকব না।’ বলাই বাহুল্য, ট্রাম্পের এই বার্তার লক্ষ্য শ্বেত আমেরিকা, বিশেষত শহরতলির শিক্ষিত শ্বেতকায় নারী। আগামী নির্বাচনে এঁদের ভোটই নির্ধারণ করবে কে হবে আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।
বাইডেনের জন্য আরেক সমস্যা, তাঁর ব্যাপারে মার্কিন ভোটারদের তুলনামূলক অনুৎসাহ। রিপাবলিকান সমর্থকেরা ট্রাম্পের প্রতি যতটা উৎসাহী, ডেমোক্রেটিক ভোটাররা বাইডেনের প্রতি ততটা নন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘এন্থুজিয়াজম গ্যাপ’।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, বাইডেন—যাঁর নাম তিনি দিয়েছেন ‘স্লো জো’—শুধু বৃদ্ধই নন, তাঁর বুদ্ধিশুদ্ধিও লোপ পেতে শুরু করেছে। তিনি ঘরে বসে আছেন, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন না এবং তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করতে ভীত।
ডেমোক্র্যাটদের একাংশ ট্রাম্পের এই কথার সঙ্গে একমত। ট্রাম্পবিরোধী হিসেবে পরিচিত চলচ্চিত্রকার মাইকেল মোর বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ট্রাম্পের প্রতি তাঁর অনুগত সমর্থকদের উৎসাহ প্রবল।
এমনকি ডেমোক্রেটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও বাইডেনের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে পেলোসি দাবি করেন, বাইডেনের উচিত হবে ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো বিতর্কে না নামা, কারণ তাহলে তাঁর সব মিথ্যাবাদিতা ও চাতুরীকে বৈধতা দেওয়া হবে। কেউ কেউ পেলোসির এই বক্তব্যকে বিতর্কের ব্যাপারে বাইডেনকে নিয়ে তাঁর দলের অস্বস্তির কথাই প্রমাণ করে। বাইডেন নিজে অবশ্য প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে পেলোসির বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, নির্ধারিত তিনটি বিতর্কের জন্য তিনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তাঁর কর্মক্ষমতা বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করতে তিনি আরও ঘনঘন জনসমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতেও সম্মত হয়েছেন।