সন্তান নিয়ে ক্লাস করতে এসেছিলেন এক শিক্ষার্থী। কিন্তু বাচ্চা সামলে ঠিকঠাকভাবে ক্লাস লেকচার তুলতে পারছিলেন না তিনি। বিষয়টি নজর এড়ায়নি শিক্ষক রামাতা সিসোকো সিসের। ছাত্রী যেন নির্বিঘ্নে ক্লাস করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে দারুণ এক কাজ করেছেন তিনি। ছাত্রীর বাচ্চাকে তিন ঘণ্টা পিঠে নিয়ে ক্লাস নিয়েছেন তিনি!
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রামাতা সিসোকো সিসে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া গিনেট কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ক্লাসের আগে এক শিক্ষার্থী যোগাযোগ করে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, সন্তানকে নিয়ে তিনি ক্লাসে আসতে পারবেন কি না। অনুমতি দেওয়ায় নিজের ছেলেসন্তানকে নিয়েই ক্লাস করতে আসেন ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু একদিকে বাচ্চাকে সামলে অন্যদিকে ঠিকভাবে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছিলেন না তিনি। তখনই রামাতা সিসোকোর ‘মাতৃত্ববোধ’ জেগে ওঠে। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর বাচ্চাকে তিন ঘণ্টা নিজের পিঠে ঝুলিয়ে ক্লাস নিয়েছেন তিনি।
আলোচিত সেই শিক্ষক রামাতা সিসোকো ইয়াহু নিউজকে বলেছেন, ‘ওই ছাত্রী এর মধ্যেই একটি ক্লাস মিস করে ফেলেছিল। আরও ক্লাস মিস দিয়ে বাকিদের চেয়ে পেছনে পড়তে চাইছিল না সে। সামনে তার পরীক্ষাও আছে। আমাকে তাই সে জিজ্ঞেস করে, সন্তান নিয়ে ক্লাসে আসতে পারবে কি না। আমি জানি ওই ছাত্রী দারুণ স্মার্ট ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। সে সত্যিই শিখতে চায়।’
ছাত্রীর সন্তানকে পিঠে ঝুলিয়ে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে রামাতা সিসোকো বলেন, ‘আমার জন্ম মালিতে। সেখানে আমি দেখেছি, পিঠে কাপড় বেঁধে নারীরা নিরাপদে তাদের সন্তান বহন করে। আমি চাইছিলাম বাচ্চাটাও নিরাপদে থাকুক, আবার ওই ছাত্রীও যেন মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে পারে। তখন আমি কাছেই থাকা একটি পরিষ্কার ল্যাব কোট পিঠে বেঁধে বাচ্চাটিকে বহন করি।’
মায়ের এমন কীর্তিতে অত্যন্ত গর্বিত রামাতা সিসোকোর মেয়ে আনা। বাচ্চাকে পিঠে নিয়ে ক্লাস নেওয়ার সেই ছবি শেয়ার করে টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মা আমার আদর্শ। তাঁর এক শিক্ষার্থী বেবিসিটার না পাওয়ায় সন্তান নিয়ে ক্লাসে এসেছিল। একজন প্রকৃত আফ্রিকান মায়ের মতোই আমার মা ওই শিক্ষার্থীর সন্তানকে তিন ঘণ্টা পিঠে বহন করে ক্লাস নিয়েছেন। এমন একজন মায়ের সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত।’
ছবিটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন রামাতা সিসোকো। এরই মধ্যে ওই ছবিতে ৫৭ হাজারের বেশি লাইক পড়েছে।