মেঘা মজুমদারের 'অ্যা বার্নিং'

চেনা গল্পের অসাধারণ উপস্থাপনা

মেঘা মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
মেঘা মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

মেঘা মজুমদারের নাম চলতি বছরের শুরুর দিকে আমেরিকায় বাংলা ভাষীদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। চেনা গল্পের অসাধারণ উপস্থাপনা দিয়ে তিনি লিখেচন 'অ্যা বার্নিং' নামে একটি উপন্যাস। নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখযোগ্য লেখক হিসেবে তাঁর ৩২০ পৃষ্ঠার 'অ্যা বার্নিং' উপন্যাসের প্রশংসা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বেস্ট সেলার তালিকাতেও উঠে এসেছে এই উপন্যাস। উপন্যাস হিসেবে 'অ্যা বার্নিং' যে ব্যতিক্রমী, এমন কথা বলেছেন অনেকেই। 


'ছেলেদের হাফপ্যান্ট পরে বাইরে চলাফেরা করি। চুল কাটি ছেলেদের মতো করে। ক্রিকেট খেলি। কিন্তু ঘরে লুকিয়ে লিপস্টিক দিই। মার শাড়ি পরি। আয়নায় দেখি, কেমন লাগছে? পরে চাচারা বাবাকে বুঝিয়ে, আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। অপ্রাকৃতিক এক বালক ঘরে থাকলে কি পরিবারের মান মর্যাদা কিছু থাকবে? চাচাতো ভাইবোনেরা বেডরুমে লুকিয়ে বড় বড় চোখে আমাকে দেখে। মা আপ্রাণ চেষ্টা করে আমাকে বাড়িতে রাখার। বিশেষ স্কুলে ভর্তি করানো, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বাহানা করে মা। কিন্তু সামাজিক রীতির বাইরে কতদিন আর টিকবে মায়ের আবদার! আমাকে চলে যেতে হয়। পরিবার থেকে দূরে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে বসবাস শুরু করি। হৃদয় দিয়ে মার কষ্ট উপলব্ধি করি। মা আমাকে খুজে ফিরবে বছরের পর বছর, এ আমি জানি। জানি, মা আমায় আজও খুঁজছে। তবে আমি, এখন তাঁর কথা আর ভাবি না।'

মেঘা মজুমদারের উপন্যাস `অ্যা বার্নিং` নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। ছবি: সংগৃহীত

ওপরের কথাগুলো লাভলীর। লাভলী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। কলকাতায় বাস। সাংস্কৃতিক মেধার অধিকারী সে। লাভলীর গল্প নিয়েই এগিয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। এর মাঝে রয়েছে-রাজনীতি, হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব ও ভারত-বাংলাদেশ ইস্যু স্থান পেয়েছে এই উপন্যাসে। মেঘা মজুমদারের লেখা প্রথম এই প্রথম উপন্যাসটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
মেঘা মজুমদারের 'অ্যা বার্নিং' উপন্যাস নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে সাম্প্রতিক সময়ের ভারতের ধর্মীয়, সমাজ এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট স্থান পেয়েছে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী সরকারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার কারণে শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হয়। বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম অহরহ। নতুন নাগরিকত্ব আইনের কারণে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়। সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় প্রকাশ্যে লক্ষ্যবস্তু করা হয় বহু ধর্মালয়। বাড়ি ঘর পোড়ানো হয়। দাঙ্গায় পঞ্চাশের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ৮৫ বছরের বৃদ্ধাকে নিজ ঘরের ভেতরে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। এসবই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।


কলকাতায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাঙালি তরুণী মেঘা মজুমদার। হার্ভার্ডে স্কলারশিপ নিয়ে তিনি আমেরিকায় আসেন। পরে জনস হপকিন্স থেকে সামাজিক নৃতত্ত্বের ওপর গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। এখন নিউইয়র্ক সিটিতেই থাকেন।