চূড়ান্ত বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন
চূড়ান্ত বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন

চূড়ান্ত বিতর্কে দুজনেই সংযত, চমক নেই ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ছিলেন অনেকটাই সংযত। তাঁরা একে অন্যকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। একে অন্যের সঙ্গে সম্মানের সুরে কথা বলেছেন। এমনকি একে অন্যকে আক্রমণের সুরটিও ছিল শান্ত।

বিবিসির খবর বলছে, বোঝা গেছে, মাইক বন্ধ করে দেওয়ার নতুন নিয়ম কাজে লেগেছে। সিএনএনের খবর বলছে, প্রথম বিতর্কের তুলনায় ট্রাম্প সংযত আচরণ করেছেন। তবে নাটকীয় কিছু দেখাতে পারেননি। রিপাবলিকান সমর্থকেরা চূড়ান্ত বিতর্কে ট্রাম্প নাটকীয় কিছু দেখাবেন বলে প্রত্যাশা করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৮ টা) টেনেসি অঙ্গরাজ্যের নাশভিলের বেলমন্ট ইউনিভার্সিটিতে চূড়ান্ত বিতর্কে মুখোমুখি হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।

মার্কিনদের স্বার্থরক্ষার ইস্যু যেমন করোনাভাইরাস, জাতীয় নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক চলে। বাইডেনের ছেলের ইউক্রেনে ব্যবসা, ট্রাম্পের কর পরিশোধ না করা, ওবামাকেয়ার নিয়ে পরস্পরের প্রতি আক্রমণ ছিল সংযত।

সিএনএনের খবর বলছে, আগের বিতর্কের তুলনায় সংযত আচরণ করলেও ট্রাম্প চূড়ান্ত বিতর্কে নাটকীয় কিছু করতে পারেননি। বিভিন্ন ইস্যুতে জো বাইডেনকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেছেন ট্রাম্প। মিথ্যে তথ্যও দিয়েছেন।

বিতর্কে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো মুহূর্ত ছিল দক্ষিণ সীমান্তে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি। এ সময় ট্রাম্প ও বাইডেন লাতিন ভোটারদের ইস্যুতে বিতর্ক করছিলেন। কিন্তু কত দিনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শিশুরা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে পারবে তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ট্রাম্প।

পরিবারের কাছ থেকে সন্তানদের এভাবে আলাদা করে রাখাকে ট্রাম্পের নিষ্ঠুর আচরণ বলেন বাইডেন। জবাবে ট্রাম্প শুধু এটুকুই জানাতে পারেন যে এসব শিশুরা যত্নে আছে।

২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মার্কিন সীমান্ত রক্ষাকারী কর্মকর্তারা পরিবারের কাছ থেকে ৫৪৫ শিশুকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। আইনজীবীরা তাঁদের মা-বাবার কাছে পৌঁছাতে পারেননি। পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করে একত্রিত করার জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন।

করোনাভাইরাস ইস্যুতে ট্রাম্প নিজের সংক্রমিত হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসছে শীতে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। তবে ট্রাম্প বলেন অন্য কথা। তিনি বলেন, কিছু জায়গায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। কিন্তু করোনা শিগগির চলে যাবে।

শীতে করোনার সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাইডেনও। কিন্তু ট্রাম্প ভুল পরিসংখ্যান দিয়ে বাইডেনকে পরাস্ত করতে চান। তিনি বলেন, ৯৯ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়েছে। তিনি মনে করেন না শীতে ভয়াবহ কিছু হবে।

বিতর্কে যা ছিল:

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি জানান, শুরুতেই করোনাভাইরাস নিয়ে বিতর্কে জড়ান দুই প্রার্থী। জো বাইডেন বলেন, দেশের দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর দায়িত্ব যিনি নিতে পারেন না তাঁর দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকার কোনো অধিকার নেই। মহামারি মোকাবিলার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানান তিনি। করোনাভাইরাসকে নিয়েই মার্কিনরা বাঁচতে শিখেছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেছেন, আমাদের দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা যে দেশই করবে তাদের মূল্য দিতে হবে। এটা আমেরিকার সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে জো বাইডেন সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, রাশিয়াসহ অন্য সব দেশের ওপর তিনি যথেষ্ট কঠোর। চীনে ট্রাম্পের ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাইডেন। ট্রাম্পের কর পরিশোধ না করার সমালোচনা করেন বাইডেন। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি লাখ লাখ ডলার কর আগেই পরিশোধ করেছেন। আগের অবস্থানে অনড় থেকে ট্রাম্প বলেন, তিনি আইআরএস অডিট করার পর ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ করবেন। তবে তা কবে করবেন তা জানাননি।

ইউক্রেনে ছেলের ব্যবসা নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনার জবাব দেন বাইডেন। তিনি বলেন, কেউ বলেনি হান্টার বাইডেন ইউক্রেনে ভুল কিছু করছেন।

ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। এ নিয়ে সমালোচনা করেন বাইডেন।

জো বাইডেন ওবামা কেয়ারকে শক্তিশালী করে ওষুধের মূল্য কমানো ও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করার পরিকল্পনার কথা বলেন। ট্রাম্প জানান, তিনি আইন করে ওবামা কেয়ারের বিতর্কিত বিষয় বাতিল করতে পেরেছেন। ওবামাকেয়ার বাতিল করে আরেকটি ভালো স্বাস্থ্যসেবা আইন চালু করার পরিকল্পনার কথা জানান ট্রাম্প।

৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে এটিই চূড়ান্ত বিতর্ক। নিউইয়র্কে সন্ধ্যার পর থেকেই লোকজনকে টিভির সামনে বসে থাকতে দেখা যায়।

বিতর্কের আগে ব্রিকটাউনের ডেমোক্র্যাট সমর্থক স্টিভ লিমানিওন জানান, জো বাইডেনকে কিছুই করতে হবে না। বিতর্কে ট্রাম্প আবারও উত্তেজিত হবেন।

আমেরিকার লোকজনকে নিজের মতো তুলে ধরার চেষ্টা করবেন।

জর্জ ওয়াকার নামে রিপাবলিকান দলের এক সমর্থক জানান, শেষ বিতর্কে ভিন্ন এক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখার আশা করছেন তিনি।

ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে জাতীয়ভাবে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড রাজ্যের বেশির ভাগ জায়গাতেই পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প।

২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প ও বাইডেনের প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এই বিতর্কে কথা বলার সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়ী করা হয়েছে। বিতর্কটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে লজ্জাজনক প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাম্পের করোনা সংক্রমণের কারণে দ্বিতীয় বিতর্ক ভার্চ্যুয়াল করার প্রস্তাব দিয়েছিল বিতর্ক কমিশন। ট্রাম্প তাতে বেঁকে বসেন। দ্বিতীয় বিতর্কটি বাতিল হয়ে যায়।

বিতর্ক সামাল দিতে নিয়ম পাল্টে ফেলা হয়েছে। দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত বিতর্কে বক্তব্যের সময় কোনো প্রার্থী অন্য প্রার্থীকে কথা বলায় বাধা দিলে তাঁর মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

এনবিসি নিউজের বিখ্যাত সাংবাদিক ক্রিসটেন ওয়াকার এ বিতর্ক সঞ্চালনা করেন।

বিতর্কের আগেই সঞ্চালক ক্রিসটেনকে আক্রমণ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেছেন, হোয়াইট হাউসে এনবিসি নিউজের হয়ে দীর্ঘদিন দিন থেকে কাজ করা সাংবাদিক ক্রিসটেন ওয়াকার দলীয় লোক। তাঁর মা-বাবা দুজনই ডেমোক্র্যাট এবং বাইডেনের প্রচার তহবিলে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়েছেন।

২১ অক্টোবর ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রিসটেন ওয়াকারকে ‘ভয়ংকর’ বলেও উল্লেখ করেন।

বিতর্কের কয়েক ঘণ্টা আগে সিক্সটি মিনিটস ধারণ করা অনুষ্ঠান নিজেই প্রকাশ করে টুইট করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ টুইটেও সিবিএস এর বিখ্যাত অনুষ্ঠান সিক্সটি মিনিটসকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন। বিতর্কের সঞ্চালক ক্রিসটেন ওয়েলকার আরও খারাপ বলে ট্রাম্প টুইট করেন।