প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কঠোর হলেও বৈধ অভিবাসীদের জন্য বন্ধ হচ্ছে না আমেরিকা। দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য আধা দক্ষ ও দক্ষ লোকদের আমেরিকায় অভিবাসন দেওয়ার একটি পরিকল্পনা নিয়ে হোয়াইট হাউস তৎপর হয়েছে। পারিবারিক অভিবাসন ও ডাইভার্সিটি ভিসায় (ডিভি) আসা অদক্ষ অভিবাসীদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করে অভিবাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার কাজ করছেন বলে খবর বেরিয়েছে।
আমেরিকায় প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি লোকের অভিবাসন ঘটে থাকে। নানা পর্যায়ের এ অভিবাসনে কর্ম ভিসায় দেড় লাখেরও কম লোকের আগমন হয়। কর্ম ভিসায় আমেরিকায় আসা লোকজনই মূলত দক্ষ কর্মী। পারিবারিক অভিবাসন ও ডিভি ভিসায় আসা লোকের সংখ্যাই বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই এসব অভিবাসীর মধ্যে মার্কিন অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখার মতো দক্ষতা থাকে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল অভিবাসীর বয়স্ক ও কর্ম-অক্ষম নিকটাত্মীয় আমেরিকার আসার পরপরই নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আশ্রয় নিতে হয়। ফুড স্ট্যাম্প, মেডিকেইডসহ নানা মানবিক কর্মসূচির গ্রহীতাদের অনেকেরই আমেরিকার কর্ম প্রবাহে সম্পৃক্ত হওয়ার মতো দক্ষতা নেই। এসব কারণকে চিহ্নিত করেই সাম্প্রতিক সময়ে পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে মেধাভিত্তিক অভিবাসনের কথা উঠেছে। নানা বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ বিষয়ে তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
দক্ষিণের দেয়াল নির্মাণ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার সংকল্প ঘোষণা করেছেন। তাঁর এ উদ্যোগকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছে অভিবাসী গ্রুপগুলো। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর স্টেট অব ইউনিয়ন বক্তৃতার পর বলেছেন, আমেরিকা দক্ষ অভিবাসীদের স্বাগত জানাবে। আমেরিকার অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্যই তা করতে হবে।
এদিকে আমেরিকার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও চাপ দিচ্ছে দক্ষ জনশক্তির জন্য। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনবলের অভাব দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যে। দক্ষতার ঘাটতি দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে আমেরিকার আধিপত্য ধরে রাখা সম্ভব নয় বলে বারবার সতর্ক করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে জ্যারেড কুশনার হোয়াইট হাউসে একটি ছোট গ্রুপ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এ গ্রীষ্মের মধ্যেই প্রস্তাবটি আইন প্রণেতাদের সামনে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। তবে অভিবাসন নিয়ে আমেরিকার সমাজ যেমন বিভক্ত, তেমনি বিভক্ত আইনপ্রণেতারাও। আমেরিকার ভেঙে পড়া অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে আইনপ্রণেতাদের ঐক্য না হলে এ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামা বা জর্জ ডব্লিউ বুশ এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন। সাবেক এ দুই প্রেসিডেন্ট নিজেদের দলেরই সমর্থন পাননি।
আমেরিকার অধিকাংশ মানুষও এখন অভিবাসন নিয়ে চরমভাবে বিভক্ত। পারিবারিক অভিবাসন বন্ধের প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। অভিবাসী গ্রুপগুলোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও আমেরিকার অধিকাংশ লোকজন অবৈধ অভিবাসন বন্ধের পক্ষে। জনগণের এ মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন সংস্কার আইন করতে পারবে কি না, তা এখনো বলার সময় আসেনি। যদিও ব্যাপকসংখ্যক ডেমোক্র্যাটও এখন পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে মেধাভিত্তিক অভিবাসনের পক্ষে কথা বলছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার চরম অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত। পলিটিকো বলছে, জ্যারেড কুশনারের পরিকল্পিত অভিবাসন সংস্কারের অনেকগুলো সভায় স্টিফেন মিলার অনুপস্থিত ছিলেন। আবার কুশনারের অনুমোদন ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো অভিবাসন সংস্কার বাস্তবতার মুখ দেখবে বলেও কেউ মনে করে না।
ফেডারেশন অব আমেরিকান ইমিগ্রেশন রিফর্মের পরিচালক আর জে হিউম্যান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে হবে। যেকোনো নামে অধিক অভিবাসন মানে হচ্ছে আমেরিকার কর্মীদের কাজে ভাগ বসানো, যা আমেরিকানদের কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না।
জ্যারেড কুশনার যে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন বলে সংবাদ বেরিয়েছে, সেখানে অল্প দক্ষ ও দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে। এ ছাড়া মৌসুমি ও স্থায়ী অদক্ষ সাধারণ কর্মজীবীদের জন্যও অভিবাসনের পথ খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। আমেরিকার কল-কারখানা ও কৃষি খাতে শ্রম সংকট মোকাবিলার জন্যই এমন প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের এ পরিকল্পনা প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে আইনপ্রণেতাদের বিতর্ক শুরু হলেই মূলত বোঝা যাবে আমেরিকার অভিবাসন সংস্কার নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কার্যকরভাবে কত দূর যেতে পারবেন।