যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি নির্বাচনের ফল নিয়ে ২০০০ সালের মতো আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টে দুই দলের প্রভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আর এমন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক রুথ ব্যাডার গিনসবার্গ মারা গেলেন। তাঁর মৃত্যুতে সুস্পষ্টভাবে বিপাকে পড়েছে ডেমোক্র্যাটরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন নির্বাচনের ফল কোনোভাবে আদালত পর্যন্ত গড়ালে ডেমোক্র্যাটরা নিশ্চিতভাবেই গিনসবার্গের অভাব বোধ করবে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো রক্ষণশীল ব্যক্তিকে গিনসবার্গের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন, তবে দারুণ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে রিপাবলিকানরা। আর তেমনটি হলে উভয় পক্ষের বর্তমান প্রবণতা বলছে, গোটা যুক্তরাষ্ট্রই এক দীর্ঘসূত্রী সংকটের মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকির আইনের অধ্যাপক জশুয়া ডগলাস রয়টার্সকে বলেন, এ ধরনের কিছু হলে প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে এটা বলা যায়, ২০০০ সালের বিতর্ককেও এটি ছাড়িয়ে যাবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে নিয়োগ পাওয়া গিনসবার্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটরা এমনিতেই পিছিয়ে। নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক আদালত পর্যন্ত গড়ালে আগে একজন রক্ষণশীল বিচারককে দলে টানতে পারলেই তাদের হতো। এখন তাদের দলে ভেড়াতে হবে অন্তত দুজন রক্ষণশীল বিচারককে।
রুথ ব্যাডার গিনসবার্গের মৃত্যুর আগে সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীলরা এগিয়ে ছিল। নয়জন বিচারকের মধ্যে পাঁচজনই ছিলেন রক্ষণশীল। সে ক্ষেত্রে গিনসবার্গের পদটি খালি থাকলেও ডেমোক্র্যাটরা পিছিয়ে থাকছেন। কারণ, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে নিয়োগ পাওয়া গিনসবার্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটরা এমনিতেই পিছিয়ে। নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক আদালত পর্যন্ত গড়ালে আগে একজন রক্ষণশীল বিচারককে দলে টানতে পারলেই তাদের হতো। এখন তাদের দলে ভেড়াতে হবে অন্তত দুজন রক্ষণশীল বিচারককে।
এ বিষয়ে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ভোটাধিকার প্রকল্পের পরিচালক ডেল হো রয়টার্সকে বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে অনেক মামলা হয়েছে। নিকট অতীতে এমনটা দেখা যায়নি।
এসব মামলার অধিকাংশই হচ্ছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ভোটদানের বিকল্প পন্থার সম্প্রসারণ করা হবে কি হবে না—সে বিষয়ে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিতেই ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন রক্ষণশীল বিচারকেরা। এ ক্ষেত্রে উইসকনসিন, টেক্সাস ও আলাবামার কথা উল্লেখ করা যায়। ফলে ভোটের পর নির্বাচনের ফল নির্ধারণী কোনো মামলা ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষে আসবে বলে মনে করছেন না দলটির সমর্থকেরা।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, গিনসবার্গের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন রাজনীতিতে তৈরি হওয়া বিভাজনের বাস্তবতাটি প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের আগেই তাঁর স্থলে কোনো রক্ষণশীলকে নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে এরই মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, গিনসবার্গের শূন্য পদে আরেকজন নারীকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই নারী যে উদারনৈতিক হবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তবে নির্বাচনের আগে কোনো রক্ষণশীল দ্বারা গিনসবার্গের পদটি পূরণ করা না হলে ডেমোক্র্যাটদের কিছু আশা থাকবে। সে ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসকে তারা কাছে টানতে চাইবে, যিনি এরই মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকেই বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি উদারনৈতিক অবস্থান নিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে সংকট হচ্ছে জন রবার্টস ডেমোক্র্যাট ঘরানার পক্ষে অবস্থান নিলেও সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান হবে ৪-৪। উভয় পক্ষেই সমানসংখ্যক বিচারপতি থাকায় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সুস্পষ্ট ফল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে যে বিতর্কের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার কোনো মীমাংসা পাওয়া যাবে না। আর এমন হলে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়বে যুক্তরাষ্ট্রই।