সৌদি সাংবাদিক জামাল কাসোগি হত্যায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কোনো হাত ছিল কি না, এই সত্য নিশ্চিতভাবে কোনো দিনই জানা যাবে না। তা ছাড়া আমেরিকার জন্য সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব সে দেশ বা তার নেতৃত্বকে যুক্তরাষ্ট্র পরিত্যাগ করবে না।
গতকাল মঙ্গলবার তিন পাতার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সিআইএর সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও তিনি সালমান অথবা সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন না। আইন বা নৈতিকতার চেয়ে তাঁর কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ। কেউ কেউ তাঁর এই অবস্থানকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নয়–‘সৌদি আরব ফার্স্ট’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। গতকাল হোয়াইট হাউস থেকে অবকাশ কাটাতে ফ্লোরিডায় তাঁর হোটেলে রওনা হওয়ার আগে ট্রাম্পকে সে প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজের অবস্থান আরও পরিষ্কার করে বলেন, ‘শত কোটি ডলারের ব্যবসা রাশিয়া বা চীনের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। আমার জন্য এই নীতির একটাই অর্থ, আমেরিকা ফার্স্ট।’
ট্রাম্পের এই যুক্তি কেবল বিরোধী ডেমোক্র্যাটরাই নয়, তাঁর নিজ দলের নেতারাই প্রত্যাখ্যান শুরু করেছেন। এর আগে ট্রাম্পের কাছে মিত্র হিসেবে পরিচিত সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম যুবরাজ সালমানকে কার্যত খুনি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এই লোকটা বিষের মতো ক্ষতিকর। আরেক রিপাবলিকান সিনেটর বব কর্কার এই হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তের জন্য দুই ডেমোক্রাটিক সিনেটরসহ একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।
গতকাল ট্রাম্পের বিবৃতি পাঠের পর সর্বশেষ যে রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছেন তিনি হলেন র্যান্ড পল। ট্রাম্পের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন এই সিনেটর সৌদি আরবের কাছে ১১০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্র বিক্রি চুক্তি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, এই চুক্তি বাতিল হওয়া উচিত, অন্যথায় একজন খুনিকে পুরস্কৃত করা হবে।
ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে সৌদির সাথে অব্যাহত সম্পর্কের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন ইরানকে ঠেকাতে এই আঁতাতের প্রয়োজন রয়েছে। সে যুক্তি প্রত্যাখান করে র্যান্ড বলেন, ট্রাম্পের কথা শুনে মনে হয় তিনি বলছেন, সৌদি আরব খারাপ, কিন্তু ইরান এর চেয়েও খারাপ। দুই অশুভের মধ্যে কে অধিক খারাপ, সেই নৈতিক বিচারে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে না। সিনেটর পল অবশ্য ট্রাম্পের গৃহীত সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে দায়ী না করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টনকে দায়ী করেছেন। ‘এই কথা ট্রাম্পের নয়, বোল্টনের’—এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেন র্যান্ড পল।
বিরোধী ডেমোক্র্যিাটরা অবশ্য ট্রাম্পকে তেমন ছাড় দিতে নারাজ। সিনেটর জিন শাহিন ট্রাম্পের বক্তব্যকে আমেরিকার গণতন্ত্রের মুখ কালিমা বলে বর্ণনা করেছেন। আরেক ডেমোক্রেটিক সিনেটর টিম কেইন বলেছেন, এটা খুবই লজ্জার কথা যে ট্রাম্প একজন খুনে প্রশাসনের পক্ষ নিয়েছেন। এটা কখনো ‘আমেরিকার স্বার্থ সবার আগে’—এই নীতির প্রতিফলন হতে পারে না। তিনি সৌদি আরবে মার্কিন অস্ত্র রপ্তানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।