প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিতে ক্যাপিটল ভবনে নজিরবিহীন তাণ্ডবের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি মার্কিনরা ‘লজ্জা’ পেয়েছেন। ক্যাপিটল ভবনে উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের এই তাণ্ডব গণতন্ত্রের এক কালো অধ্যায়। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের বর্বরোচিত আক্রমণ এককথায় অবিশ্বাস্য। এই হামলা মানুষের ভোটের অধিকারের ওপর হামলা।
উগ্রবাদীরা প্রমাণ করল, সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই, বর্ণ নেই। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটুক এমনটি আশা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের (এফআরবিএনওয়াই) নিরীক্ষা তত্ত্বাবধায়ক ইমতিয়াজ আর চৌধুরী।
প্রকৌশলী শফিক আহমেদ বলেন, ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের এই আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের কলঙ্ক। ক্ষমতালোভী ট্রাম্পের বিচার না হলে ভবিষ্যতে দেশটির গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।
ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক লিটু আনাম বলেন, ‘একজন রিপাবলিকান সমর্থক হয়েও আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই। এতে দীর্ঘদিন ধরে লালন করা মার্কিন গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আর ট্রাম্পের ক্রমাগত মিথ্যাচার ও উসকানিমূলক কথাই এ জন্য দায়ী।’
যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ বলেন, ট্রাম্প সত্যিকারের রিপাবলিকানদের নেতা নন। তিনি উগ্রবাদী এবং জঙ্গিদের নেতা, সেটি এই হামলায় প্রমাণিত হয়েছে। সেই কারণে বেশির ভাগ রিপাবলিকান নেতারা এই নগ্ন হামলার প্রতিবাদ করছেন। নানা অপকর্মের কারণে জেলে যাওয়ার ভয়ে তিনি বিভিন্ন নাটক করে যাচ্ছেন। তিনি নিজেকে নিজেই ক্ষমা করা যায় কিনা, তা নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। তিনি শুধু রিপাবলিকান পার্টিই নয়, মার্কিনদের বিভক্ত করেছেন।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন পুলিশের সংগঠন বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ—বাপার সভাপতি ক্যাপ্টেন কারাম চৌধুরী বলেন, ‘সেদিন যা ঘটেছিল তা হল অপরাধ, নৈরাজ্য ও ঘৃণ্য কাজ। এই ছেলেরা নিজেদের দেশপ্রেমিক বলে অভিহিত করেছে, তাদের এই কার্যকলাপের সঙ্গে তারা নিজেদের অপ্রতিবাদী হিসেবে চিত্রিত করেছে। এ রকম ঘটনা আশা করা যায় না। এই ঘটনায় তীব্র ঘৃণা জানাই।’
ইমাম কাজী কাইয়ুম বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উসকে দেওয়া গৃহপালিত সন্ত্রাসীদের এই সহিংস হামলাকে আমি ৯/১১–এর সন্ত্রাসী হামলার চেয়েও ভয়াবহ মনে করি। ৯/১১–এ সন্ত্রাসীদের হামলা ছিল বাণিজ্যিক দুটো ভবনের ওপর। আর ৬ জানুয়ারির এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা মার্কিন সরকারের মূল কেন্দ্রবিন্দু ক্যাপটিল হিলের ওপর, যা সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল হক বলেন, কাছ থেকে দেখা জঘন্য একজন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একজন লোভী, নির্লজ্জ, মিথ্যাবাদী প্রেসিডেন্ট তিনি।
স্মৃতি হাতড়ে মনজুরুল বলেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নর্থ ক্যারোলাইনার একটি কোম্পানির দ্বিতীয় দিনের কনভেনশনে ট্রাম্পকে প্রথম দেখি। খুব কাছ থেকে তাঁর বক্তব্য শুনেছিলাম। কনভেনশনের কোম্পানিটি সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না। শুধু জেনেছি কোম্পানিটির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আয়োজন। কোম্পানিটি বাংলাদেশের ডেসটিনি ও যুবকের আদলে এলএলএম কোম্পানি! অনেকটা হতাশ হলাম।
মনজুরুল আরও বলেন, কনভেনশনের শেষ দিন দর্শকদের সামনে অতিথি হিসেবে হাজির ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁকে করতালি দিয়ে সবাই স্বাগত জানালেন। অবশ্য ট্রাম্প তখন রাজনীতিতে আসেননি। তিনি হায় হায় কোম্পানিটির ভূয়সী প্রশংসা করলেন। কিছুটা ফানি কথা বললেন, তারপর চলে গেলেন। পরে ইউটিউব সার্চ করে দেখি, কোম্পানিটির পক্ষে তিনি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন। অথচ তিনি তখন যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। কোথাও যাওয়ার আগে তাঁর চিন্তা করা উচিত ছিল। অর্থের বিনিময়ে তিনি যেকোনো কাজ করতে পারেন! তা না হলে এ রকম একটা প্রতারক কোম্পানির হয়ে কীভাবে কাজ করেন। এটাই লোভী মানুষ হিসেবে তাঁর বড় উদাহরণ।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ওই কোম্পানির মাধ্যমে পরে হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। হঠাৎ তার মতো মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ভাবতেই অবাক লাগে। নির্বাচনে হেরে গেছেন। অথচ তিনি ক্ষমতা ছাড়তে চান না। যেকোনো কায়দায় ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা করছেন।