যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় হামলাকারীরা ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি’ নিয়ে এসেছিলেন। দাঙ্গা করার জন্য উগ্রবাদীরা অস্ত্র, বেতার যোগযোগ ব্যবস্থাসহ নানা সরঞ্জাম নিয়ে ক্যাপিটলের আশপাশে জড়ো হন। তাঁদের এই প্রস্তুতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল।
ক্যাপিটলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত চারজন কর্মকর্তার মধ্যে তিনজন গতকাল মঙ্গলবার কংগ্রেসের শুনানিতে অংশ নিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। কংগ্রেসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৬ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ফল প্রত্যায়নের জন্য কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা ক্যাপিটলে হামলা চালান। হামলার ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন। সরাসরি হামলায় পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রাণ হারান। ওই ঘটনার জেরে মেট্রো পুলিশের আরও দুই কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেন।
ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান রবার্ট কোনটি বলেছেন, দাঙ্গা মোকাবিলায় পেন্টাগন দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানায়। ট্রাম্পের সমর্থকেরা সহিংস হয়ে উঠলেও পেন্টাগন ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনে বিলম্ব করে। তা দেখে রবার্ট কোনটি বিস্মিত হয়েছেন বলে আইনপ্রণেতাদের জানান।
রবার্ট কোনটি জানিয়েছেন, সহিংসতা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পর বিভিন্ন নিরাপত্তা বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জরুরি ফোনালাপ করতে থাকেন। এসব ফোনালাপের এক ঘণ্টার বেশি সময় পরে ন্যাশনাল গার্ডের উপস্থিতিই দেখা গেছে ক্যাপিটলের কাছে। দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়া লোকজনকে ক্যাপিটল থেকে তাড়াতে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে।
ক্যাপিটলে হামলার আগে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, শক্ত লড়াই করতে হবে। না হলে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না। তাঁর এই উসকানিমূলক বক্তব্যের পরই হামলা শুরু হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিসহ অন্য আইনপ্রণেতাদের খুঁজতে থাকেন দাঙ্গাকারীরা। তাঁদের কার্যালয় তছনছ করা হয়। প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নোট রেখে যান ট্রাম্প সমর্থকেরা।
শুনানিতে ওয়াশিংটন ডিসির ভারপ্রাপ্ত পুলিশপ্রধান আরও জানান, প্রায় ৩০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য আগে থেকেই ক্যাপিটল ভবন এলাকায় নিয়োজিত ছিলেন। ন্যাশনাল গার্ডের এসব সদস্যকে মূলত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। দাঙ্গা মোকাবিলার জন্য কোনো সমন্বিত প্রস্তুতি ছিল না। সমন্বিত গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কারোর কোনো আলোচনা হয়নি।
ক্যাপিটলে নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় ‘দাঙ্গায় উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেও উচ্চকক্ষ সিনেটে খালাস পান।