করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে কয়েকজনের শরীরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৫টি কোম্পানি ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান মানুষের ওপর প্রয়োগ শুরু করেছে। তিনটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক প্রয়োগের খুব কাছাকাছি চলে আসার কথা বলেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, বড়জোর ছয় মাসের মধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন হাতের নাগালে চলে আসবে বলে আশা করছেন তাঁরা। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলছেন, করোনাভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন আসতে আরেকটু বেশি সময় লাগতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় এ ভ্যাকসিন তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে জেনিফার হলার (৪৫) নামের এক নারী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে প্রথম ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকে এখনই অনেক অসহায় বোধ করছে। আমি বুঝতে পারছিলাম যে এখানে আমি কিছু করতে পারি। আমি আগ্রহ নিয়ে এখানে এসেছি।’
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা পরীক্ষায় ২৮ দিনের মধ্যে হলারকে দুটি ইনজেকশন দেওয়া হবে। কোনো ভ্যাকসিন সরাসরি মানুষের ওপর প্রয়োগের আগে বেশ কিছু প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই হলারের ওপর প্রথম পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ পরীক্ষা সফল হলে তারপর ওই ধরনের ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও বিপণনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।
ভ্যাকসিন তৈরিতে কায়সারা পারমানেন্তে ওয়াশিংটন রিসার্চ ইনস্টিটিউট নামের সিয়াটলের এ কোম্পানি একা কাজ করছে না; যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে, এতে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরাও গভীরভাবে যুক্ত। দেশটির কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক গত জানুয়ারি মাসেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ শুরুর কথা বলেছিল।
কোয়ালিশন অব এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই) নামের ওই গবেষণা দল এখন দিনরাত কাজ করে চলেছে। ওই দলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘তাঁরাও ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য একজন স্বেচ্ছাসেবককে নির্বাচন করেছেন। শিগগিরই তাঁরা পরীক্ষা চালাবেন। মানুষের ওপর পরীক্ষার দিকে যত দ্রুত সম্ভব অগ্রগতি হচ্ছে। জুন মাসের শেষ নাগাদ তা সম্পন্ন হবে।’
বিশ্বজুড়ে যে ৩৫টি কোম্পানি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে, এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান প্রাণীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এখন মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
চীনের পিপলস ডেইলির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির একাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেসের গবেষকেরা এই সপ্তাহে একটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার অনুমোদন পেয়েছেন। চীনা সরকার নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে এ ভ্যাকসিন মানুষের জন্য নিরাপদ কি না, তা প্রথম ধাপে পরীক্ষা করে দেখা হবে। পরীক্ষার জন্য ১০৮ জন সুস্থ ব্যক্তিকে কাজে লাগাবে দেশটি। ১৬ মার্চ থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ পরীক্ষা চালানো হতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলছেন, ভ্যাকসিন অনুমোদর প্রক্রিয়া দ্রুত হচ্ছে এবং করোনার ওষুধ আগামী ছয় মাসের মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাবে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোপুরি পরীক্ষা করা এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের আগে আশা করা যায় না। তবে উরসুলা বলছেন, তিনি জার্মানির বায়োটেক কোম্পানি কিউরভ্যাকের সঙ্গে আলোচনার পর শিগগিরই ওই ভ্যাকসিন আসার ব্যাপারে আশাবাদী।’
জার্মানির প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন আনতে কাজ করছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ওই কোম্পানিকে ১৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্য করার কথা জানিয়েছে। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন ওই কোম্পানিকে কিনে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ খবর প্রত্যাখ্যান করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে সিয়াটলভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বোস্টনভিত্তিক বায়োটেক প্রতিষ্ঠান মর্ডানা ঘোষণা করেছে, আগামী মাস থেকে তারা মানুষের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরীক্ষামূলক পর্যায়ে চলে যাবে।
নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে বিভিন্ন কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে। এ দৌড়ে শামিল হয়েছে যুক্তরাজ্যের ইমারজেক্স। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিনে কাজ করা কর্মীদের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনে কাজ করতে বলেছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই ভ্যাকসিন পরীক্ষা শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি।