গান, নাচ, আবৃত্তি, সেমিনার, গিটার পরিবেশন ও বই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘অনুভবে নজরুল’।
জ্যাকসন হাইটসের পিএস সিক্সটি নাইন স্কুলে অনুষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শতদলের এটি চতুর্থ পরিবেশনা। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রতি বছর শতদল কাজী নজরুল ইসলামের ওপর বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ আনুষ্ঠানিক ভাবে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় কবির নাতনি খিলখিল কাজী, সংগীত শিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, তরুণ প্রজন্মের প্রতিভা তমাল হোসেন ও নায়লা কবিরকে।
তমাল হোসেন ও নায়লা কবিরের পরিবেশনা ছাড়াও নজরুলের কবিতা নিয়ে বৃন্দ আবৃত্তি সবার হৃদয় স্পর্শ করে। নিউইয়র্কের ছড়াকার মনজুর কাদেরের নির্দেশনায় এই প্রযোজনায় অংশ নেন মুন জেবীন হাই ও নাহরীন ইসলাম। তাঁদের বৃন্দ আবৃত্তির শুরুটা ছিল মনজুর কাদেরের লেখা ছড়া দিয়ে।
দুঃখু মিয়ার গল্প শিরোনামে এই কবিতা নিয়ে মনজুর কাদের বলেন, ‘সবাই নজরুলকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে জানেন। কিন্তু আমার কবিতায় আমি তাঁকে দেখাতে চেয়েছি প্রেমের কবি, সাম্যের কবি ও অসাম্প্রদায়িকতার কবি হিসেবে।’
নজরুলের লেখা ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ ও ‘কামাল পাশা’ কবিতা ছিল এই বৃন্দ পরিবেশনায়।
প্রবাসে তাঁর দাদুকে নিয়ে যে ব্যাপক চর্চা হচ্ছে, এতে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন কাজী নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজী।
নজরুল সংগীতের গুরু ও স্বরলিপিকার সালাউদ্দিন আহমেদ একের পর তাঁর অসামান্য পরিবেশনায় মুগ্ধ করেন দর্শকদের। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা, সেমিনার ও অতিথি শিল্পীদের অসাধারণ পরিবেশনায় কয়েক শ দর্শককে যেন মন্ত্রমুগ্ধের মত ধরে রেখে ছিল পুরো সময়। বিশেষ করে সালাউদ্দিন আহমেদ, খিলখিল কাজী ও তমাল হোসেনের পরিবেশনা দর্শকরা বহুদিন মনে রাখবে।
অনুষ্ঠানে শতদলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিভাগে অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয় সংগীতজ্ঞ মুত্তালিব বিশ্বাস, খিলখিল কাজী, সালাউদ্দিন আহমেদ, জিয়া উদ্দিন আহমেদ, সাপ্তাহিক বাঙালী’র সম্পাদক কৌশিক আহমেদ ও দেবল গুপ্তাকে।
অনুষ্ঠানের আয়োজনে ছিল শতদল ও নর্থ আমেরিকা নজরুল কনফারেন্স কমিটি। অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন শতদলের সভাপতি কবির কিরণ। উপস্থাপনায় ছিলেন কবির কিরণ ও সাদিয়া খন্দকার।
অনুষ্ঠানে মুক্তধারা নর্থ আমেরিকা কবি নজরুলের লেখা বইয়ের প্রদর্শনী করে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শতদল প্রতি বছর আয়োজিত উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলনে সহযোগিতা করে থাকে। এ বছর গত ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে আয়োজিত উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলনে অবদান রেখেছে শতদল। ওই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা, খিলখিল কাজী ও সালাউদ্দিন আহমেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তারা।
শতদলের সভাপতি কবির কিরন বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলামের অসামান্য প্রতিভা নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবু যতদূর সম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি তাঁর লেখাগুলো ভবিষ্যতে অনুবাদ করার প্রত্যাশা আছে ইংরেজিতে। যাতে করে কবির লেখা নতুন প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাতে পারে। শুধু নজরুল নয়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও আমরা পৌছে দিতে চাই বিশ্ববাসীর কাছে।’ কবির কিরণ বলেন, শতদল অনেক শিল্পী উপহার দিয়েছে। যাঁদের মধ্যে আছেন শবনম আবেদী, তমাল হোসেন, নায়লা কবিরসহ অনেকে।
৭ অক্টোবরের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, বিজ্ঞানী নুরুন নবী, নজরুল গবেষক গুলশান আরা কাজী, সংগীত বিশেষজ্ঞ মুত্তালিব বিশ্বাস, সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রধান সম্পাদক ফজলুর রহমান, দলিলুর রহমান, কাজী বেলাল, ইফ্ফাত আহমেদ, জিনাত নবী, সাপ্তাহিক আজকাল–এর সম্পাদক মনজুর আহমেদ, সংগীত শিল্পী সেলিমা আশরাফ, কবি এ বি এম সালেহ উদ্দিন, ফোবানার জেনারেল সেক্রেটারি জাকারিয়া চৌধুরী, টাইম টেলিভিশন–এর সিইও ও সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের, নৃত্য শিল্পী অ্যানি ফেরদৌস, সংগীত শিল্পী নিলুফার জাহান, মিসেস জিয়া উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজার্সির সভাপতি গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট মোর্শেদ আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাহাঙ্গীর ডিকেন্স প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিলেন শাহ নেওয়াজ চৌধুরী, আকবর হায়দার কিরন, হাসানুজ্জামান সাকি, নাসিমা আখতার, ছন্দা বিনতে সুলতান, সাবরিনা কবির ছন্দা, হাকিকুল ইসলাম খোকন প্রমুখ।
তবলায় ছিলেন তপন মোদক, কি–বোর্ডে রিপন, অক্টোপ্যাডে সজীব মোদক আর সাউন্ডে ছিল সাউন্ডগিয়ার।