কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদ ও গণমাধ্যম—এই দুইয়ের ওপর খেপেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস তাঁর বিরুদ্ধে বিরামহীন হয়রানিতে লিপ্ত। অন্যদিকে গণমাধ্যম লিপ্ত মিথ্যাচারে। এই দুই পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ম্যুলারের তদন্ত নিয়ে কংগ্রেসের শুনানিতে হোয়াইট হাউসের বর্তমান বা সাবেক কোনো কর্মকর্তা অংশ নিক, তা তিনি চান না।
অন্যদিকে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের সংগঠনের নৈশভোজ বর্জন করতে বলেছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে রাশিয়ার সম্পৃক্ততা নিয়ে সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন মার্কিন বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার। ওই প্রতিবেদনে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প সরাসরি কোনো আঁতাতে যুক্ত ছিলেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তদন্তের সময় ট্রাম্পের একাধিকবার বাধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ম্যুলারের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব অভিশংসনের বদলে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যাবলির কঠোর তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই রণকৌশলের অংশ হিসেবে তাঁরা ট্রাম্পের আর্থিক লেনদেনের হিসাব চেয়ে পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি কংগ্রেসের সামনে শুনানিতে অংশ নিতে একাধিক ট্রাম্প সহযোগীকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের অন্যতম হলেন হোয়াইট হাউসের সাবেক আইনজীবী ডন ম্যাগেন। ম্যুলারের প্রতিবেদনে ম্যাগেনের উদ্ধৃতি দিয়ে দেখানো হয়েছে কীভাবে ট্রাম্প বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা দিয়েছেন। আরেকজন হলেন হোয়াইট হাউসের কর্মীদের নিরাপত্তাবিষয়ক সাবেক পরিচালক কার্ল ক্লাইন। গোয়েন্দা বিভাগের আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার কী করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ছাড়পত্র পেলেন, কংগ্রেস তাঁকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়।
ট্রাম্প কংগ্রেসের সামনে তাঁদের শুনানিতে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছেন। গতকাল ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ম্যুলার তদন্তকালে হোয়াইট হাউস সব ধরনের সহযোগিতা করেছে, এরপর আবার জিজ্ঞাসাবাদের কিছু থাকতে পারে না। তিনি চান না হোয়াইট হাউসের বর্তমান বা সাবেক কোনো কর্মকর্তা কংগ্রেসের সামনে শুনানিতে অংশ নিক।
নির্বাহী বিভাগের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব আইন পরিষদের, শাসনতন্ত্রেই এই অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে। সে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে কংগ্রেসকে আদালতের আশ্রয় নিতে হতে পারে। মঙ্গলবার এক সিদ্ধান্তে প্রতিনিধি পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি শুনানিতে অংশ নিতে অস্বীকার করায় ক্লাইনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের নির্দেশ অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতার বদলে সংঘর্ষের পথ বেছে নেওয়ায় শাসনতান্ত্রিক সংকট দেখা দিতে পারে। কংগ্রেসের নির্দেশ মানার বদলে আদালতের আশ্রয় নেওয়ার একটি সম্ভাব্য কারণ, হোয়াইট হাউস হয়তো আশা করছে কংগ্রেসের দায়ের করা মামলাগুলো শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে। সেখানে রক্ষণশীল বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় রায় তাদের পক্ষে যাবে বলে আশা করছে।
গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও ট্রাম্পের যুদ্ধ আরও তেতে উঠেছে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কলামিস্ট পল ক্রুগম্যানের এক নিবন্ধে ট্রাম্প এতটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন যে গতকাল এক টুইটে এই পত্রিকাকে তিনি হাঁটু মুড়ে ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেন। তিনি ক্রুগম্যানকে মিথ্যাচারের জন্য দোষারোপ করে বলেন, ‘লোকটি সব বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।’
উল্লেখ্য, ক্রুগম্যান তাঁর নিয়মিত কলামে লিখেছিলেন, হোয়াইট হাউসে যে লোকটি বাস করছেন, তিনি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
শুধু টাইমস নয়, সব মার্কিন গণমাধ্যমের ওপর ট্রাম্প এতটাই খেপেছেন যে হোয়াইট হাউসে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ শনিবার যে ঐতিহ্যিক নৈশভোজের আয়োজন করেছে, তিনি তাতে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, হোয়াইট হাউসে কর্মরত তাঁর সব কর্মীকে এই নৈশভোজ বর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বরাবরই এই ভোজের শুরুতে একজন আমন্ত্রিত বক্তা ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের প্রতি প্রবল বিদ্রূপাত্মক ভাষণ দিয়ে থাকেন। সে বিদ্রূপের হুল এড়াতে গত বছরেও ট্রাম্প এই নৈশভোজ বর্জন করেন।