প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দুটি বছর যথেষ্ট নিরাপদে কাটিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কংগ্রেসের উভয় কক্ষ রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাঁর কাজ বা কথা নিয়ে কোনো প্রতিরোধ হয়নি। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা আপত্তি করেছেন, কঠোর সমালোচনা করেছেন, কিন্তু ভোটের জোর না থাকায় ট্রাম্পের গায়ে আঁচড়টিও বসাতে পারেননি।
অবস্থা বদলে যাবে পরবর্তী কংগ্রেসে। নিম্নকক্ষ (প্রতিনিধি পরিষদ) এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে। তাঁরা ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্পের কর হিসাব থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত থেকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে অতিরিক্ত মাখামাখি, কোনোটাই তাঁদের নজরদারি এড়াবে না।
ন্যান্সি পেলসি, যাঁর আগামী কংগ্রেসের স্পিকার হওয়া প্রায় নিশ্চিত, তিনি জানিয়েছেন, কয়েকজন নবনির্বাচিত সদস্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের পক্ষে মত দিলেও তিনি সে পথে এগোতে চান না। গত দুই বছর রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির অব্যাহত দলগত কোন্দলে কাজ খুব এগোয়নি। এবার তিনি চান অবস্থার পরিবর্তন হোক। যে কয়েকটি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার হিসাবে তিনি নির্বাচিত করেছেন তার মধ্যে রয়েছে, অবকাঠামো সংস্কার, স্বাস্থ্যবিমা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও ওষুধের মূল্য হ্রাস।
পেলসির কথা ট্রাম্পের এতটা পছন্দ হয়েছে যে তিনি আগ বাড়িয়ে বলেছেন, স্পিকার হতে হলে তাঁর যদি অতিরিক্ত সমর্থন লাগে, তিনি রিপাবলিকানদের মধ্য থেকে তা নিশ্চিত করতে পারেন। উল্লেখ্য, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে প্রায় ১৫ জন সদস্য এখনো স্পিকার হিসেবে পেলসির বিরোধিতা করছেন। তাঁরা চান নতুন নেতৃত্ব দলের হাল ধরুক। তবে নবনির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা প্রায় সবাই পেলসির প্রতি তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাও তাঁর নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
পেলসি নিজে ট্রাম্পের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান না নিলেও দলের অনেক শীর্ষ নেতাই মনে করেন, প্রেসিডেন্টকে আর ছাড় দেওয়া যাবে না। পরবর্তী কংগ্রেসের বাজেট বরাদ্দ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন প্রবীণ সদস্য ইলাইজাহকামিংস। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। ট্রাম্প নিজে শাসনতন্ত্রের ‘আর্থিক সুবিধাবিরোধী’ যে ধারা রয়েছে, নিত্য তার লঙ্ঘন করছেন। এসবের তদন্তের জন্য তিনি তাঁর কমিটিতে শুনানির ব্যবস্থা করবেন। শুধু ট্রাম্প নয়, তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার ও একাধিক মন্ত্রীকে তাঁর কমিটির সামনে ডেকে পাঠাবেন। ট্রাম্পের আয়করের হিসাবও তিনি চেয়ে পাঠাবেন। এত দিন ট্রাম্প বলে এসেছেন, তাঁর আয়করের হিসাব সরকারিভাবে অডিট বা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সে কথা উপেক্ষা করে রাজস্ব বিভাগকে আয়করের হিসাব হাজির করতে বলার ক্ষমতা তাঁর কমিটির রয়েছে।
ট্রাম্পের জন্য আরও বড় মাথাব্যথা অপেক্ষা করছে প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় ও গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটিতে। নিউইয়র্কের জেরি ন্যাডলার, যিনি বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান হচ্ছেন, তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি বিষয়ে তদন্তে তিনি আগ্রহী। শিশুদের সীমান্ত এলাকায় অভিভাবকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার যে নীতি এই সরকার অনুসরণ করে, তার গুমর উদ্ধার না করা পর্যন্ত তিনি থামবেন না। রাশিয়ার হস্তক্ষেপ প্রশ্নে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের কাজে যাতে হস্তক্ষেপ না হয়, তিনি তা নিশ্চিত করতে চান। ‘আমি দেখতে চাই, এই প্রশ্নে ট্রাম্প বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন কি না,’ ন্যাডলার বলেছেন।
সবচেয়ে তেতে আছেন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান এডামশিফ, গত সপ্তাহে ট্রাম্প তাঁকে ব্যঙ্গ করে ‘লিটল শিট’ নামে অভিহিত করেছেন। শিফ আগামী কংগ্রেসে গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির দায়িত্ব নেবেন। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের তদন্ত তাঁর প্রধান লক্ষ্য, তবে সবকিছুর আগে তিনি সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যায় যুবরাজ সালমানের ভূমিকা তল্লাশ করে দেখতে চান। সিআইএ এই ব্যাপারে সালমানের ব্যক্তিগত ভূমিকা নিশ্চিত করলেও ট্রাম্প বিষয়টি অগ্রাহ্য করেছেন। তাঁর জন্য নৈতিকতার চেয়ে বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন। শিফ জানিয়েছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে ট্রাম্প ও তাঁর পরিবারের কী ধরনের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে, তা তিনি খতিয়ে দেখতে চান।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে ডেমোক্র্যাটদের সাবধান করে দিয়েছেন, তাঁরা যদি তদন্তের নামে বাড়াবাড়ি করেন, তাহলে তিনিও বৈরীসুলভ অবস্থান গ্রহণ করবেন। তবে ঠিক কী তিনি করবেন, সে কথা খোলাসা করেননি। কংগ্রেসের একটি শাসনতান্ত্রিক দায়িত্বই হলো প্রশাসনের ওপর নজরদারি করা। সে কাজ থেকে তিনি কংগ্রেসকে কীভাবে ঠেকাবেন, তা স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্পের মিত্র হিসেবে পরিচিত রক্ষণশীল আইনজীবী জন পদহোরেৎস নিউইয়র্ক পোস্ট পত্রিকায় মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প মুখে যা–ই বলুন, তিনি জানেন, ডেমোক্র্যাটরা আগামী দুই বছর তাঁর অবস্থা বেহাল করে ছাড়তে পারেন। যেকোনো নথি আদায়ের জন্য সমন জারির ক্ষমতা তাদের রয়েছে। ‘আমার মনে হয়, এরপর যা হতে যাচ্ছে তা দেখে আগামী বছরের কোনো এক সময় বেসামাল হয়ে ট্রাম্প হয়তো ভাববেন, এর চেয়ে ম্যুলারের তদন্তই ভালো ছিল।’