সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে আবার জড়ো হচ্ছেন। ‘জাস্টিস ফর জানুয়ারি ৬’ নামে তাঁরা ১৮ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। এ সমাবেশকে ঘিরে আবার সহিংস ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা চালান ট্রাম্প-সমর্থকেরা। এ হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের প্রতিবাদ জানাতেই ট্রাম্প-সমর্থকেরা সমাবেশ ডেকেছেন। ট্রাম্প-সমর্থক ‘প্রাউড বয়েজ’ নামের শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী সংগঠনসহ অন্যরা এ সমাবেশ নিয়ে অনলাইনে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কায় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ব্যাপক নিরাপত্তা–প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হয়ে উঠেছে।
ক্যাপিটল হিলে হামলা ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০০ জনের বেশি লোককে শনাক্ত করে তদন্ত করা হয়েছে। তাঁদের অনেকের নামে অপরাধ আইনে আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সমর্থন জানানোর জন্যই ট্রাম্প-সমর্থকেরা ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্পবিরোধী ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-সহ আরও কিছু উদারনৈতিক সংগঠন একই দিনে ওয়াশিংটন ডিসিতে সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় একধরনের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
আর এক দিন পরেই ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার ২০ বছর পূর্তি। এ নিয়ে আমেরিকায় সতর্কাবস্থা বিরাজ করছে। তার পরই ১৮ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প-সমর্থকদের সমাবেশ। এ সমাবেশকে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।
৬ জানুয়ারির সমাবেশের আগে ক্যাপিটল হিল, হোয়াইট হাউসসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কাঁটাতারের বেষ্টনী দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল। সেই ব্যারিকেড পরে উঠিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে আবার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় কাঁটাতারের বেষ্টনী বসছে।
সমাবেশের সময় কংগ্রেস অবকাশে থাকার কথা। তারপরও ক্যাপিটল পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রধান টম মাঙ্গার, প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি, সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চার্লস শুমার, সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেলকে নিয়ে সভা আহ্বান করেছেন। এ সভায় ১৮ সেপ্টেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নিরাপত্তা–প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করার কথা জানানো হয়েছে।
৮ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি নিরাপত্তা–প্রস্তুতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা না করেই বলেছেন, তাঁরা রাজধানীর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন।
এফবিআইয়ের সাবেক উপপরিচালক অ্যান্ড্রু ম্যাককেবি সতর্ক করে বলেছেন, ১৮ সেপ্টেম্বরের সমাবেশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে গত ৬ জানুয়ারি উগ্রবাদীরা যে কাণ্ড ঘটিয়েছে, তা যেন আর না হতে পারে।
এ ধরনের সমাবেশে উগ্রবাদী ব্যক্তিবিশেষের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড নিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে এমন ব্যক্তিবিশেষ যাতে কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বত্র সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
‘হোয়াইট লাইভস ম্যাটার’ নামের একটি শ্বেতাঙ্গ সংগঠন ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। ‘প্রাউড বয়েজ’ সংগঠনের সদস্যদের এমন প্রচারণায় ১৮ সেপ্টেম্বর ঠিক কত লোকের সমাগম ঘটবে, তা ধারণা করা যাচ্ছে না।
আয়োজকেদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। তবে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো আইনপ্রণেতা এখনো ১৮ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
ক্যাপিটল পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থার বিস্তারিত না জানিয়ে বলা হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বরের সমাবেশকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ৬ জানুয়ারির ঘটনার পর রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা বিভাগকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণসহ বাইরের বিভিন্ন উপায়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিনিময় আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।
রাজধানীর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি সমর্থকদের উদ্দেশে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তৃতা দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তাঁর দেওয়া উসকানিমূলক বক্তৃতার জের ধরে ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়। হামলার ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ হামলার জেরে ট্রাম্প প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের মুখে পড়েছিলেন।
নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে যে হেরে গেছেন, তা মানতে ট্রাম্প এখনো রাজি নন। এমনকি তিনি বাইডেনকে এখনো ‘প্রেসিডেন্ট’ বলে সম্বোধন করেন না। তাঁর উগ্র সমর্থকদেরও একই মনোভাব। তাঁরাও বিশ্বাস করেন, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি করে ট্রাম্পকে হারানো হয়েছে।