নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেওয়ার কাছাকাছি অবস্থানে নেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরং তাঁর আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি দাবি করেছেন, তাঁদের কাছে ভোট কারচুপির প্রমাণ আছে। ফলাফল পাল্টে যাবে।
নির্বাচনে জয়ী ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেন রোববার নিজ শহরে গির্জায় প্রার্থনাসভায় যোগ দিয়েছেন। বাইডেন ও তাঁর নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তাঁদের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গতকাল তাঁদের কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচি ছিল না। তবে দেশের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে তাঁরা আজ সোমবার বক্তব্য দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল রোববার কাটিয়েছেন ভার্জিনিয়ার গলফ ক্লাবে। হোয়াইট হাউস থেকে গলফ ক্লাবে যাওয়া ছাড়াও একের পর এক টুইট করেছেন তিনি। এতে নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেওয়ার কোনো কথা বলেননি তিনি।
বাইডেন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, এমন শব্দ এখন পর্যন্ত ট্রাম্প একবারই টুইট বার্তায় উল্লেখ করেছেন। তবে বলেছেন, বাইডেন জয়ী হয়েছেন, কারণ ভোটে কারচুপি হয়েছে।
‘নিউইয়র্ক পোস্ট’-এর সাংবাদিক মাইকেল গুডউইনের সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবার বলেছেন, সবাই জানে এ নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। শতভাগ ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাত কোটি চার লাখের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচনে হারতে পারেন না বলে দাবি করেন তিনি।
সাংবাদিক মাইকেল গুডউইন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি কখনো পরাজয় মেনে নেবেন? উত্তরে ট্রাম্প বলেছেন, ‘দেখি সবকিছু কীভাবে যায়!’
ট্রাম্প একাধিকবার এমন প্রশ্নের উত্তরে তাঁর পরাজয় মেনে নেওয়ার কোনো আভাস দেননি। উপরন্তু দাবি করেছেন, ডমিনিয়ন নামের যে সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমে বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব জায়গায়ই জালিয়াতি হয়েছে।
কানাডাভিত্তিক একটি কোম্পানির এই সফটওয়্যার যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। কোনো প্রযুক্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি।
মার্কিন সরকারের কোনো বিভাগ থেকেও এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে জালিয়াতির কোনো প্রমাণ বা সন্দেহের কথা জানানো হয়নি।
ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছেন, কোম্পানিটির মালিকপক্ষের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের যোগাযোগ আছে। তারা ডেমোক্র্যাটদের প্রচার তহবিলে অর্থ দিয়েছে।
ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি বলেছেন, নির্বাচনের যে ফলাফল এসেছে, তা পাল্টে যাবে। ফলাফল পাল্টে দেওয়ার মতো তথ্যপ্রমাণ তাঁদের কাছে আছে বলে দাবি করেছেন জুলিয়ানি। তবে এখনই এসব প্রমাণের কথা তিনি উপস্থাপন করতে অস্বীকার করেছেন।
‘ফক্স নিউজ’-এর সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জুলিয়ানি বলেছেন, দুর্নীতির মেশিনের মাধ্যমে কারচুপি করা হয়েছে। সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে ভোট কারচুপির প্রমাণ তাঁদের কাছে সংগৃহীত আছে বলে দাবি করেন নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র জুলিয়ানি। তিনি বলেছেন, ভোট গণনায় রিপাবলিকানদের উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি।
অভিযোগ করলেও ট্রাম্প শিবির থেকে এখনো ভোট কারচুপি বা জালিয়াতির কোনো শক্ত প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
সংবিধান অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারি নতুন প্রশাসনের ক্ষমতা গ্রহণের কথা। বাইডেনের পক্ষ থেকে ‘ট্রানজিশন’ নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানানো হলেও এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করছে না। প্রস্তুতির জন্য বাইডেন কোনো ফেডারেল অর্থ বরাদ্দও পাচ্ছেন না।
নির্বাচনে জয় পাওয়ার পর থেকেই বাইডেন কথা কম বলছেন। তিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা বলেছেন। দেশের করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি নিজের বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছেন। পরিকল্পনা নিয়ে তাদের সঙ্গে সভা করছেন। গতকাল বাড়ির পাশের গির্জায় গিয়ে প্রার্থনায় যোগ দিয়েছেন বাইডেন। উপদেষ্টাদের সঙ্গে একান্ত সভা শেষে আজ তিনি দেশের অর্থনীতি নিয়ে বক্তৃতা দেবেন বলে জানানো হয়েছে।