নিউইয়র্ক নগরে ইয়েলো ক্যাবের পর এবার উবার চালকদের ওপর নিয়মের খড়্গ নেমে এসেছে। উবারে কাজের পরিধি দিন দিন সীমিত হয়ে আসছে। অনেকেই স্বাধীন পেশা হিসেবে উবারকে বেছে নিয়েছিলেন। ব্যয়বহুল এই নগরে সংসার চালাতে অ্যাপসভিত্তিক উবার চালকেরা শুধু উবারেই কাজ করতেন। সম্প্রতি উবার কর্তৃপক্ষ কাজের সময়সীমা সীমিত করে দিয়েছে। এখন চালকদের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ করতে হয়। গাড়ির চাহিদা বা যাত্রীর চাপ রয়েছে এমন এলাকা ছাড়া উবার চালকেরা অ্যাপস খুলতে পারেন না। ফলে চালকেরা ইচ্ছে করলেই যেকোনো স্থানে তাদের অ্যাপস চালু করতে পারছেন না।
নতুন বাধ্যবাধকতার কারণে উবারের চালকদের আয় রোজগারও কমে গেছে অনেক। এ কারণে আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন উবারের ক্যাবচালকেরা। ব্যবসা সফল না হওয়ায় অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জুনো গত ১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ক্যাবচালকদের মধ্যে আরও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বর্তমানে বেশির ভাগ চালক উবার, লিফ্ট, ভিয়াতে কাজ করছেন। এ সব কোম্পানিতে কাজ করতে কোম্পানি ও নগর কর্তৃপক্ষ নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। একজন চালক চাইলে যেকোনো এলাকা থেকে অ্যাপস চালু করতে পারবেন না। উবারে কাজ করতে হলে তাকে আগে থেকেই অ্যাপসের মধ্যে সময়ের জন্য বুকিং দিতে হবে। একজন চালক সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা বা ক্ষেত্র বিশেষে ১১ ঘণ্টা কাজ করার জন্য বুকিং দিতে পারবেন। অথচ আগে নিয়ম ছিল দিনে–রাতে যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে অ্যাপস ওপেন করা যেত। তবে যাত্রীর চাহিদা থাকলে চালকেরা যেকোনো স্থান থেকে অ্যাপস ওপেন করতে পারবেন।
লিফ্টেও চালকদের কাজের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যেকোনো সময় লিফ্টে কাজ করতে হলে এক মাসের মধ্যে ১৮০টি রাইড পূরণ করতে হবে। এই রাইডগুলো পূরণ করতে হলে ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। অথবা রাত ১১টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। দিনে দুই ঘণ্টা, চার ঘণ্টা কাজ করে এক শ আশিটি রাইড পূরণ করতে হবে। তবে শনিবার দিন রাত যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ার কারণে যেকোনো সময় অ্যাপস ওপেন করা যায়।
আগে যে কেউ গাড়ি কিনে উবারে কাজ করতে পারত। কিন্তু দুই বছর থেকে ট্যাক্সি লিমোজিন কমিশন টিএলসি প্লেট (লাইসেন্স) দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে উবার, লিফ্ট কোম্পানিও চালক নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন করে কাউকে আর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।
চালকেরা অভিযোগ করছেন, উবার যাত্রীরা যদি চালকের প্রতি কোনো ধরনের অভিযোগ করেন, উবার কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়া চালকের অ্যাপস বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে করে তাৎক্ষণিকভাবে একজন চালকের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শত শত চালকের উবার, লিফ্টের অ্যাপস এমনি করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন উবারচালক জিয়াউল হক বলেন, একজন যাত্রীর মিথ্যা অভিযোগের কারণে গত এক বছর ধরে আমার অ্যাপস বন্ধ রয়েছে। একাধিক বার উবারের অফিসে গিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
লিফ্টের চালক জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করেন, ‘একজন যাত্রী আমার গাড়িতে সমস্যা ও সেফটি ইস্যুর বিষয়টি তুলে অভিযোগ করেন। লিফ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্ত ছাড়াই আমার অ্যাপস বন্ধ করে দিয়েছে। অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা ছিল। কিন্তু আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনোই সুযোগ দেওয়া হয়নি।’
চালকদের এসব হয়রানি থেকে মুক্তির উপায় প্রসঙ্গে ব্ল্যাক ক্যাবচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, উবার, লিফ্ট চালকদের শক্তিশালী কোনো অ্যাসোসিয়েশন নেই, যারা তাদের পক্ষে অবস্থান নেবে বা তাদের হয়ে কথা বলবে। ইয়েলো ক্যাবচালকদের এমন সংগঠন রয়েছে। একজন ইয়েলো ক্যাবির কোনো সমস্যা হলে তাদের অ্যাসোসিয়েশন ভুক্তভোগী চালককে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উবারসহ অ্যাপভিত্তিক চালকেরা অসংগঠিত। ফলে তারা নানাভাবে বঞ্চিত হলেও বলার কেউ নেই। এতে করে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।