মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সাধারণ মানুষের প্রাণ রক্ষায় তিনি ইরানে হামলা করা থেকে সরে এসেছেন। ইরানের হামলায় মার্কিন গুপ্তচর ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলা চালানোর প্রস্তুতি ছিল। তবে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির কথা বিবেচনা করে সেই হামলা তিনি থামিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলায় ১৫০ জনের প্রাণহানি ঘটতে পারত।
আজ শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানায়, হরমুজ প্রণালির কাছে ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুপ্তচর ড্রোন গত বৃহস্পতিবার ভোরে তারা ভূপাতিত করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, আন্তর্জাতিক সীমার মধ্যেই অবৈধভাবে তাদের ড্রোনটি ভূপাতিত করেছে ইরান। ট্রাম্পও দাবি করেন, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমা থেকে ধ্বংস করেছে ইরান। তবে ইরানের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগাছি বলেন, মার্কিন ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ‘শক্ত প্রমাণ’ রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ১৩ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের গুপ্তচর ড্রোনটি ভূপাতিত হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই হোয়াইট হাউসে বৈঠক ডাকেন ট্রাম্প। সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও কংগ্রেস নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উত্তপ্ত আলোচনা ও বিতর্কের পর ইরানে হামলার প্রাথমিক অনুমতি দেন ট্রাম্প। গতকাল শুক্রবার ভোরের আগেই ইরানের রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ-ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানোর কথা ছিল। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চলছিল। যুদ্ধবিমানগুলো মাঝ আকাশে ছিল, যুদ্ধজাহাজগুলোও যথাযথ স্থানে অবস্থান নেয়। কিন্তু হঠাৎ করেই হামলার প্রস্তুতি বন্ধের নির্দেশ দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক গিনা হ্যাসপেল ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পক্ষে ছিলেন। তবে পেন্টাগনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সতর্ক করেন যে এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
আজ রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ট্রাম্প জানিয়েছেন, হামলা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কারণ তিনি এই পরিস্থিতির কূটনৈতিক সমাধান চান। কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানের সঙ্গে চলতে থাকা এই উত্তেজনার সমাপ্তি চান কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে। উপসাগরীয় এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর ইরান হামলা চালিয়েছে বলেও দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ইরান এ হামলার কথা অস্বীকার করেছে।
ট্রাম্প বলেছেন তিনি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না। গতকাল রাতে প্রচারিত এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি যুদ্ধের দিকে যেতে চাই না। তবে যদি তা হয়, তাহলে তা ধ্বংস ডেকে আনবে, যা আপনি আগে কখনো দেখেননি। কিন্তু আমি এমন কিছু করার দিকে যেতে চাই না।’
ইরানের সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ওমানের মাধ্যমে ট্রাম্প তেহরানকে সতর্ক করে বলেছে, মার্কিন হামলা আসন্ন। অথচ বলছেন, তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং আলোচনায় বসতে চান। গত সোমবার ওয়াশিংটন জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলকে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করারও অনুরোধ জানিয়েছে।
সকালে একের পর এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, হামলার জন্য তাঁর তাড়াহুড়ো নেই। পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে যুক্ত থাকার কারণে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘গতকাল রাতে প্রতিশোধ নেওয়ার দিকেই আমরা ঝুঁকেছিলাম। হামলার ১০ মিনিট আগে আমি তা থামাই। ড্রোন ভূপাতিত করার সঙ্গে এটা সংগতিপূর্ণ নয়। আমার তাড়া নেই। আমাদের সামরিক বাহিনী পুনর্গঠিত হয়েছে। পৃথিবীর ভালোর জন্য যেখানেই হোক, তারা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’