সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তাঁর মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প না জেনে–বুঝেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতি হয়নি বলে মত দিয়েছেন। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বারের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখতে গিয়েই ইভাঙ্কা এমন জবানবন্দি দিয়েছেন বলে মনে করেন তিনি। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প এ দাবি করেছেন। খবর সিএনএনের।
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জয়ী হলে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান। বাইডেনের জয়ের সত্যায়নে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন ঠেকাতে ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) সহিংস হামলা চালান।
এ হামলার ঘটনায় স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার থেকে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে শুনানি শুরু হয়েছে। শুনানিতে কিছু ভিডিও জবানবন্দি উপস্থাপন করেছে এ–সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। সেখানে দেখা যায়, ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা, অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বারসহ ট্রাম্পের নিজ প্রশাসনের কর্মকর্তারাই সাবেক এ প্রেসিডেন্টের দাবি মানতে পারেননি।
শুরুতেই বিল বারের ভিডিও সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়। সেখানে তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনে জালিয়াতি হওয়ার দাবিকে ‘বুলশিট’ বলে উল্লেখ করেন। এরপর ভিডিও সাক্ষ্যে ইভাঙ্কা ট্রাম্প বলেন, ‘এটি আমার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রভাব ফেলেছে। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল বারকে শ্রদ্ধা করি। সুতরাং তিনি যা বলছেন, তা মেনে নিচ্ছি।’
এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি লেখেন, ‘ইভাঙ্কা ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল খতিয়ে দেখেনি কিংবা এ নিয়ে গবেষণাও করেনি। এ ব্যাপারে সে অনেক দিন ধরেই আর ভাবছে না। আমি মনে করি, ও (ইভাঙ্কা) শুধু বিল বার এবং তাঁর (বিল) অ্যাটর্নি জেনারেল পদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়েই এমন মত দিয়েছে।’
ইভাঙ্কা ট্রাম্পের বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে ট্রাম্প পাল্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির চেয়ারপারসন বেনি থম্পসন। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেনি বলেন, মেয়ে না জেনে–বুঝেই কথা বলছে বলে তিনি (ট্রাম্প) যেভাবে কটাক্ষ করেছেন, তার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় বাবা হিসেবে তিনি আন্তরিক নন। বাবারা কী করছেন, তা সাধারণত মেয়েরা জানে, বিশেষ করে, ঘনিষ্ঠতা থাকলে তা জানা যায়।’
বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে কমিটির চেয়ারম্যান ও ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি বেনি থম্পসন বলেন, ৬ জানুয়ারি ছিল একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সর্বোচ্চ সীমা, একটি নির্লজ্জ প্রচেষ্টা। ৬ জানুয়ারির পরপরই একজন লেখক বলেছিলেন, সরকারকে উৎখাত করতে এ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। এ সহিংসতা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। এটি ছিল ট্রাম্পের টিকে থাকার সবশেষ প্রচেষ্টা।
শুনানিতে উপস্থাপিত ভিডিও সাক্ষ্যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বার বলেন, ‘আমরা এমন কোনো বিশ্বে বসবাস করতে পারি না, যেখানে কিনা ক্ষমতাসীন প্রশাসন নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এ প্রশাসন অসমর্থিত প্রমাণের ভিত্তিতে নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ করে।’ ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব ছাড়ার আগেই অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে পদত্যাগ করেছিলেন বার।
এ ছাড়া ট্রাম্পের যে ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁরা হলেন ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র, জামাতা জ্যারেড কুশনার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ্রে রোজেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের জ্যেষ্ঠ সহযোগীরা।
চলতি মাসে ছয়টি শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানিতে দুজন প্রত্যক্ষদর্শীরও বক্তব্য নেওয়া হবে। তাঁরা হলেন ক্যাপিটল পুলিশের কর্মকর্তা ক্যারোলিন এডওয়ার্ডস ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নিক কোয়েস্টেড।