এই সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সিটি কাউন্সিল নির্বাচন। সাংবিধানিকভাবে নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরের দিন মঙ্গলবার হলো আমেরিকার ইলেকশন ডে। ওই এক দিনে আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসাবে এবারের ‘ইলেকশন ডে’ হলো নভেম্বর মাসের ৭ তারিখ।
ওই দিন নিউইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত হবে ১১০তম মেয়র নির্বাচন। একই সঙ্গে নির্বাচন হবে আরও কিছু পদে; যার মধ্যে আছে পাবলিক অ্যাডভোকেট, কম্পট্রোলার, ৫ বোরোর প্রেসিডেন্ট, ২ জন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও ৫১ জন সিটি কাউন্সিলর। উল্লেখ্য, সিটি কাউন্সিলের ৫১ আসনের মধ্যে ৪১টিতে বর্তমান পদাধিকারীরা আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ১০টি আসনে বর্তমান পদাধিকারী নির্বাচন করছেন না অথবা বাধ্যবাধকতার কারণে পুনর্নির্বাচন করতে পারছেন না। এই নির্বাচনে কিছু কিছু পদে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আর কিছু কিছু পদে শুধুই নিয়মরক্ষার নির্বাচন হবে।
যাঁরা পুনর্নির্বাচন করছেন তাঁদের মধ্যে আছেন বর্তমান মেয়র বিল ডি ব্লাজিও, পাবলিক অ্যাডভোকেট লেটিটা জেমস, কম্পট্রোলার স্কট স্টিংগার এবং পাঁচ বোরোর প্রেসিডেন্ট কুইন্সের মিলিন্ডা কেটজ, ম্যানহাটনের গেইল ব্রেয়ার, স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের জেমস ওডও, ব্রুকলিনের এরিখ অ্যাডামস ও ব্রঙ্কসের রুবিন ডায়াজ।
নিউইয়র্কের সব ভোটকেন্দ্র সকাল ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ভোটদাতা কেবল তাঁর নির্দিষ্ট কেন্দ্রেই ভোট দিতে পারবেন। আপনি কোথায় ভোট দেবেন, ইতিমধ্যেই নির্বাচন অফিস থেকে প্রাপ্ত পুস্তিকার মাধ্যমে তা আপনার জেনে যাওয়ার কথা, যদি কোনো কারণে না পেয়ে থাকেন, তবে অনলাইনে জানতে পারেন। অনলাইনের ঠিকানা হলো (https://nyc.pollsitelocator.com/search) এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যালট কেমন হবে, তা-ও জানতে পারবেন। প্রার্থীর ভিন্নতার কারণে একেক এলাকার ব্যালট একেক রকম হবে। এ ছাড়া কাছের লাইব্রেরি থেকেও আপনার ভোটকেন্দ্রের সব তথ্য পাবেন। যাঁরা প্রথমবার ভোট দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য তথ্য হলো নির্বাচন কেন্দ্রে আপনাকে সাহায্যের জন্য অনেক সাহায্যকারী থাকবেন। নিয়ম অনুযায়ী পেপার ব্যালটেই ভোট হবে। ব্যালট পেপারের নির্দিষ্ট স্থানটি বুথে রাখা বিশেষ কলম দিয়ে ভরে দিতে হবে। এরপর ব্যালট পেপারটি স্ক্যান মেশিনে ঢুকিয়ে দিতে হবে। ইংরেজি না জানলে আপনার জন্য সাহায্যকারী দোভাষী থাকবেন।
সাধারণ নির্বাচনের সময় শুধু প্রার্থী নির্বাচন হয় না, সিটি বা স্টেট বিভিন্ন বিষয়ে গণভোটেরও আয়োজন করে থাকে এবং গণভোটের প্রস্তাবগুলো ব্যালটে স্থান পায়। এবার ব্যালটে তিনটি বিষয়ে জনমত জরিপ করা হবে। প্রথম, কনস্টিটিউশনাল কনভেনশন, অর্থাৎ শাসনতান্ত্রিক সম্মেলন করা যাবে কি না। উত্তর দিতে হবে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’। যদি হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়, তবে নিউইয়র্ক স্টেট তাদের শাসনতন্ত্র সংশোধন ও পরিবর্তনের রায় পাবে। প্রতি ২০ বছর পরপর শাসনতন্ত্রের ওপর এই জনমত জরিপ করা হয়। সেই হিসেবে পরবর্তী বার প্রথম প্রশ্নটি আবার দেখা যাবে ২০৩৭ সালে। বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন এই প্রশ্নে না ভোটের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। অপর পক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। ইউনিয়ন মনে করছে, যদি স্টেট সংবিধান পরিবর্তনের সুযোগ পায়, তবে বর্তমান চাকরির পেনশন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনবে, যা তাদের বিপক্ষে যাবে, তাই এই বিরোধিতা। দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো যদি কোনো সরকারি কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তিনি পেনশন পাওয়ার অনুপযুক্ত হবেন কি না। তৃতীয় প্রশ্ন হলো সরকার বিভিন্ন কাজে সংরক্ষিত বনভূমি ব্যবহার করতে পারবে কি না। প্রতিটি প্রশ্নেই উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ উল্লেখ করতে হবে।
আমেরিকায় ভোটদানের হার খুব কম। ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকে না, তাই কাজের ফাঁকে ভোট দিতে হয়। অনেকেই ভোটদানে খুব উদাসীন। তবে এই ভোট আমাদের কমিউনিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ভোটের মাধ্যমে আমরা যারা বাংলায় কথা বলি এবং যারা মুসলমান তারা প্রমাণ করতে পারব আমরা সংখ্যায় একেবারে কম নই। ইতিমধ্যেই সব প্রার্থী তা জানেন। আর তাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আমাদের দুয়ারে হাজির হচ্ছেন। সুতরাং, এই ভোট আমাদের জন্য মেয়র ইলেকশনের চেয়েও কিছুটা বেশি। আমাদের অবশ্যই এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।
সর্বশেষে বলব বর্তমান মেয়র একজন অভিবাসনবান্ধব ব্যক্তি এবং তাঁর সকল কার্যক্রম সাধারণ মানুষের পক্ষে। বহু অপেক্ষার পর এই মেয়রের আমলেই আমরা দুই ঈদে স্কুলের ছুটি পেয়েছি। বর্তমানে সরকারি স্কুলসমূহে হালাল খাবার সরবরাহের জন্য মেয়রের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে। আশা করি, এ দাবি পূরণ হবে। আসুন, সবাই ভোট দিই এবং ব্লাজিওকে জয়যুক্ত করি। তিনি আমাদের পক্ষের লোক।
লেখক: আবদুল্লাহ জাহিদ, গল্পকার। ই-মেইল: myshathi@gmail.com