অনলাইনে কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম আমাজনের দ্বিতীয় সদর দপ্তরকে জায়গা দিতে আমেরিকার শহরগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। এই প্রতিযোগিতায় শুরু থেকেই নিউইয়র্ক শহরের নাম বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হয়ে আসছে। সেই গুঞ্জন যে অহেতুক নয়, তা এখন প্রমাণিত। আমাজন সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য যে দুটি শহরকে বেছে নিয়েছে, তার একটি নিউইয়র্ক। ১৩ নভেম্বর আমাজন আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দিয়েছে।
তবে আমাজনকে দেওয়া অঙ্গরাজ্য ও নগর কর্তৃপক্ষের আর্থিক প্রণোদনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন করদাতারা। নিউইয়র্কে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা। বলছেন, নিউইয়র্কে ভঙ্গুর সাবওয়ে, শিক্ষা, বাসস্থানের মতো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অথচ তাদের আয়করের অর্থ থেকে আমাজনকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে। দেওয়া হবে কর রেয়াত।
নিজেদের ব্লগে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আমাজন জানিয়েছে, ‘লং আইল্যান্ডে আমাজন ২৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এর বিপরীতে আমাজন প্রণোদনা হিসেবে পাবে ১৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রতি বছর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও এর সম্প্রসারণের বিবেচনায় এক দশকে এই প্রণোদনার অর্থ গ্রহণ করবে আমাজন।’
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, নানা বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান সত্ত্বেও দ্বিতীয় সদর দপ্তর স্থাপনে আমাজনকে নিউইয়র্ক শহরের প্রতি আকৃষ্ট করতে একযোগে কাজ করেছেন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। এই সমন্বিত তৎপরতারই সুফল পাচ্ছে নিউইয়র্ক। আমাজনের দিকে সব অঙ্গরাজ্য ও নগর কর্তৃপক্ষের নজর ছিল মূলত কর্মসংস্থানের জন্য। অনলাইন কেনাকাটার সবচেয়ে বড় এই প্ল্যাটফর্ম যে শহরেই তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করুক না কেন, তা ওই শহরের জন্য হবে একটি আশীর্বাদ। আর এ কারণেই সবাই নানা সুযোগ-সুবিধার অফার নিয়ে হাজির হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সবকিছু বিচার করে আমাজন দুটি শহরে সদর দপ্তরে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর একটি নিউইয়র্কে। অন্যটি ভার্জিনিয়ার ক্রিস্টাল সিটি।
আমাজনকে আকৃষ্ট করতে দেড় শ কোটি ডলারের প্রণোদনা ঘোষণা করে নিউইয়র্ক। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির নতুন অফিস স্থাপনের জন্য আরও ৫০ কোটি ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দেয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই যাবতীয় অর্থই আসবে করদাতাদের কাছ থেকে। এখানেই শেষ নয়, কর রেয়াত থেকে শুরু করে যেকোনো কোম্পানিই চাইলে নিতে পারে এমন বিশেষ সুবিধা যার জন্য আমাজনও আবেদন করবে বলে জানা গেছে। এই বিরাট বরাদ্দের বিপরীতে আমাজন এক দশকের মধ্যে নিউইয়র্কে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সুবিধার বিনিময়ে আমাজন ম্যানহাটন ও এর আশপাশের বিভিন্ন বরোতে যেসব কার্যক্রম হাতে নেবে তাতে কোটি কোটি ডলারের কর্মসংস্থান হবে। আমাজন জানিয়েছে, নিউইয়র্কে নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে একটি ক্যাম্পাস চালু করা হবে। পাশাপাশি প্রযুক্তি শিক্ষা কার্যক্রম ও টেকসই নগর গড়ে তুলতে অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করা হবে। প্রশিক্ষণ ও শিক্ষানবিশ প্রকল্পের জন্য ৫০ লাখ ডলার ব্যয়েরও আশ্বাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কুইন্স ব্রিজ হাউসের কাছে আয়োজন করা হবে চাকরি মেলার।
আমাজনের এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এক যৌথ বিবৃতিতে বিল ডি ব্লাজিও ও অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, ‘আমাজনের নতুন সদর দপ্তরের জন্য নিউইয়র্ক নগরকে বেছে নেওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত।’
তবে প্রশ্ন উঠেছে আমাজনকে আকৃষ্ট করতে নিউইয়র্কের পক্ষ থেকে এত বিপুল অঙ্কের প্রণোদনা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে নিউইয়র্কের ভঙ্গুর সাবওয়ে, আবাসন খাতের ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা নাগরিক সংকটের এই বাস্তবতায় এত বিপুল সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে বিলাসিতা বলছেন অনেকে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘কুইন্সবাসীর কাছ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে একের পর এক কল আসছে। স্থানীয় কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এক কথায় বলতে হয়, সবাই ক্ষুব্ধ।’
শুধু ওকাসিও কর্টেজ নন, স্থানীয় অনেক রাজনীতিকই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। যদিও সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মহল আমাজনকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে এই পুরো বিষয়টির সাফল্য নির্ভর করছে বিল ডি ব্লাজিও ও অ্যান্ড্রু কুমোর যৌথভাবে কাজ করার ওপর। কারণ ১৩ নভেম্বর যে ৩২ পাতার খসড়া চুক্তিটি প্রকাশ হয়েছে, তাতে তিনটি পক্ষ জড়িত। এর একদিকে রয়েছে সিয়াটলভিত্তিক আমাজন, অন্যদিকে রয়েছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ও নগর। এক দশকব্যাপী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম দুই বছরে নিউইয়র্ক থেকে আমাজন তিন হাজার কর্মী নিয়োগ দেবে। ২০২৮ সালের মাথায় এ কর্মী নিয়োগের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৫ হাজারে।