আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের (এবিপিসি) দশক পূর্তি এবং নতুন কমিটির (২০১৯-২০) অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩ মে রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে বেলজিনো পার্টি হলে এই আয়োজন করা হয়।
উৎসবটি নিবেদিত হয় আমেরিকায় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত বাংলাদেশি-আমেরিকান রাজনীতিকদের প্রতি। এসব জনপ্রতিনিধিদের প্রেসক্লাবের সম্মাননা ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন নিউইয়র্কে বসবাসরত ২৪ মুক্তিযোদ্ধা। একই সঙ্গে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত পাঁচ প্রবাসীকে ক্রেস্ট হস্তান্তর করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, স্টেট অ্যাসেম্বলিওমেন ক্যাটালিনা ক্রুজ, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধি নূর এলাহি মিনা, কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং-এর প্রতিনিধি জর্দান গল্ডেস।
অনুষ্ঠানে কমিউনিটিকে মার্কিন ধারায় উজ্জীবিত রাখতে নিরলসভাবে কর্মরত আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবকে কংগ্রেসনাল সাইটেশন এবং জর্জিয়া স্টেটের প্রক্লেমেশন প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীতের পর সবাই এক মিনিট দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। শুরু হয় নৃত্যাঞ্জলি ড্যান্স গ্রুপের টানা ২৫ মিনিটের নৃত্য-নাট্য।
ক্লাবের নতুন কমিটির কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাশেদ আহমেদ। এ সময় নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্য শিশুক সেলিম এবং জাহেদ শরিফও মঞ্চে ছিলেন।
নতুন কর্মকর্তারা হলেন—সভাপতি লাবলু আনসার, সিনিয়র সহসভাপতি মীর ই শিবলী, সহসভাপতি আকবর হায়দার কিরণ, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, কোষাধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক কানু দত্ত, প্রচার সম্পাদক শাহ ফারুকুর রহমান। নির্বাহী সদস্যরা হলেন— শিব্বীর আহমেদ, আজিম উদ্দিন অভি, ফারহানা চৌধুরী এবং তপন চৌধুরী।
দশক পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত ‘অবিচল’ নামে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এরপরই প্রেসক্লাবের ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয় বিপুল করতালির মধ্যে।
প্রেসক্লাবের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় সমাজকর্মী ও শিল্পপতি জহিরুল ইসলাম (এবিএইচ ফার্মা), ব্যবসায়ী ও মূলধারার রাজনীতিক আক্তার হোসেন বাদল (আরএলবি গ্রুপ অব করপোরেশন), আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত আবদুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কাদের মিয়া, কমিউনিটি উন্নয়নে নিবেদিত পিপল এন টেকের সিইও আবু বকর হানিপ এবং ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনকে। এরপর প্রেসক্লাবের সেরা সদস্য হিসেবে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় চ্যানেল আই-উত্তর আমেরিকার সিইও মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদকে। দশক পূর্তি উৎসব আয়োজনে বিশেষ সহায়তার জন্য সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় ফটো সাংবাদিক শাহ জে চৌধুরীকে।
বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্য থেকে নির্বাচিত যেসব জনপ্রতিনিধিদের ক্লাবের বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় তাঁরা হলেন—জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল খান, হাডসন সিটির কাউন্সিলম্যান শেরশাহ মিজান, পেনসিলভানিয়া স্টেটের মেলবোর্ন বরোর ভাইস প্রেসিডেন্ট নূরল হাসান, কাউন্সিলম্যান মুনসুর আলী, আপারডারবি সিটি কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দিক। তাঁদের হাতে এসব ক্রেস্ট তুলে দেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা হলেন—কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান, মেজর (অব.) মঞ্জুর আহমেদ বীর প্রতীক, গোলাম মোস্তফা খান মিনাজ, রেজাউল বারি, আবুল বাশার চুন্নু, নূরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মোজাম্মেল হক, রুহুল আমিন, আবদুল আওয়াল, সানাউল্লাহ, ফিরোজুল ইসলাম পাটোয়ারি, কামরুজ্জামান, খোরশেদ আনোয়ার বাবলু, শহিদুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, মলিন নাথ, দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস এবং এমদাদুল হক।
ক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার বলেন, ‘২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাবের কর্মকাণ্ড সব সময়ই আবর্তিত হয়েছে সর্বস্তরের প্রবাসীদের নিয়ে। বাংলাদেশকে বহুজাতিক এই সমাজে আরও বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপনেও সক্রিয় রয়েছেন ক্লাবের সদস্যরা। সামনের দিনেও সে চেতনায় অব্যাহত থাকবে নতুন কমিটির দায়িত্ব পালনের প্রতিটি পর্বে।’
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. নীনা আহমেদ বলেছেন, ‘দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে একটি সমাজকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস ফ্রিডমের সুযোগ নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশি আমেরিকানদের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে আরও উৎসাহ জোগাবেন বলে আশা করছি।’
স্টেট সিনেটর জন ল্যু বলেন, ‘নতুন অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশিরা সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছেন। আর এই ধারাকে আরও বেগবান করতে গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।’
স্টেট সিনেটর শেখ রহমান বলেন, ‘প্রেসক্লাবের সদস্যদের ভূমিকা যত স্বচ্ছ হবে ততই লাভবান হবে কমিউনিটি। বহুজাতিক এ সমাজে নিজেদের অধিকার সুসংহত করার ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমের ভূমিকার বিকল্প নেই।’
স্টেট অ্যাসেম্বলিওমেন ক্যাটালিনা ক্রুজ বলেন, ‘বাংলাদেশিরা আমার খুব কাছের মানুষ। তাদের সমর্থনেই আমি গত নির্বাচনে জয় পেয়েছি। বাংলাদেশি গণমাধ্যমগুলোও অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে প্রকারান্তরে অভিবাসী সমাজকেই এগিয়ে নেওয়ার পথ সুগম করেছেন।’
ডেমোক্রেটিক পার্টির কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেছেন, ‘কমিউনিটিকে এগিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।’
শুভেচ্ছা বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। সেই ধারায় সবাইকে একীভূত রাখতে গণমাধ্যমের ভূমিকার বিকল্প নেই। এই ক্লাবের সবাই সেই দায়িত্বটি পালন করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। আমি তাঁদের অভিবাদন জানাচ্ছি।’
আবু হানিপ বলেন, ‘প্রত্যেকটি সংবাদপত্রই কমিউনিটিকে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছে। কোনটি ভালো সেটিও অবহিত করছে। কোথায় গেলে প্রত্যাশিত সার্ভিস পাওয়া যাবে-সেটিও নতুন অভিবাসীরা জানতে সক্ষম হচ্ছেন নিজ ভাষার গণমাধ্যমে।’
রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধি নূর এলাহি মিনা বলেন, ‘বহুজাতিক এই সমাজে বাংলাদেশিদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে গণমাধ্যম নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে।’