কঠোর অভিবাসন নীতি

আমেরিকায় কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের হার দ্রুত কমছে বলে উদ্যোগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানেরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে লেখা এক চিঠিতে তাঁরা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে নানামুখী চাপের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দ্রুত কমছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অহেতুক নানা কাগজপত্র দাবি করা হচ্ছে। ফলে বর্তমানে বিদেশি ছাত্র ও শিক্ষকদের আমেরিকায় আসার ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়তে যাচ্ছে। আবেদনের প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে অনেক শিক্ষার্থী ও অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছে না। চার বছরের অনার্স কোর্সের অনেক আসন খালি থেকে যাচ্ছে।
বিদেশি শিক্ষার্থী সংকটের বিবরণ তুলে ধরে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্যরকম এক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। নিউজার্সি থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের কাছে ভুক্তভোগী রাটগার্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি ক্যাম্পাসের ছাত্র-শিক্ষক, চ্যান্সেলরসহ অন্যদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে তাঁরা আইনপ্রণেতাদের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানান, জটিল অভিবাসন ব্যবস্থার কারণে ‘লগ-জ্যাম’ তৈরি হয়েছে। ফলে কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমছে, এতে কলেজের আয় কমছে, ব্যয় বাড়ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এ দেশের অনেক নামীদামি কলেজের চার বছরের অনার্স কোর্স বন্ধ করে দিতে হবে।

বর্তমানে আমেরিকায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ও শিক্ষাবিদদের কাজ করার নিয়মনীতি আগের তুলনায় অনেক কঠিন করা হয়েছে। এতে কেবল প্রতিষ্ঠান হিসেবে কলেজগুলোই দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং আমেরিকার উচ্চশিক্ষার প্রসারকে সম্পূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত করে তুলেছে। এতে পুরো আমেরিকা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বলে তারা চিঠিতে উল্লেখ করেন।
সাধারণত বিদেশি শিক্ষার্থীরা ‘ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ’ প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তি হয়। পরে তাদের গবেষণার জন্য আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানিতে ইন্টার্ন বা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত কাগজপত্রের চাহিদা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে নিয়োগকর্তারা তাদের চাকরি দিতে চান না। তাই শিক্ষার্থীরা তাদের পেশাগত শিক্ষা যথাসময়ে শেষ করতে পারে না। ২০১৬ সালে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেতে সর্বাধিক ৩ মাস সময় লাগত। আর এখন সেই একই কাগজপত্র পেতে সময় লাগছে ৫/৬ মাস। তাই তাঁরা দরকারি প্রশিক্ষণ পুরোপুরি মিস করছেন।
বিদেশে জন্ম নেওয়া কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার ফরমে অতিরিক্ত কাগজপত্রের মধ্যে আমেরিকার নাগরিকত্ব ও অভিবাসন স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এসব চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কলেজগুলোও অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে।
এইচ-১ বি ভিসার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদের শিক্ষক ও অন্যান্য দক্ষ কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে নানা কাগজপত্রের অনুরোধ ও চাহিদা দ্বিগুণ করা হয়েছে। তাই ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় লাগে, সেই সঙ্গে কলেজগুলোতে আইনি খরচ বাড়ানো হয়েছে।
প্রিন্সটন কলেজের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফার ইসিগ্রুবার ও রাটগার্টসের প্রেসিডেন্ট রবার্ট বারচিরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানেরা শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে জটিলতা অবসানে আইন প্রণেতাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেছেন, ‘আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্ভর করে এমন বিদেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের ওপর। যেসব অভিবাসন নীতি এসব ব্যক্তির এ দেশে আসার মুক্ত প্রবাহকে হুমকির মুখে ফেলেছে, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করা হোক। দেশব্যাপী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অভিবাসন নিয়মকে সীমাবদ্ধ করার ও ভিসা প্রদানের নিয়ম কঠোর করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু বিদেশি স্কুল আন্তর্জাতিক শিক্ষা কারিকুলামের তালিকাভুক্তি থেকে ইতিমধ্যেই সরে গেছে। তারা আমেরিকায় কাগজপত্রের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ছাত্র পাঠাতে নারাজি প্রকাশ করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বহুবিধ অভিবাসন সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছেন। তাই নতুন ছাত্র-শিক্ষক ভর্তি ভিসার নিয়ম কঠোর করা হয়েছে। সরকার বলছে, বিদেশি ছাত্র-শিক্ষক বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিসার মেয়াদ ও নিয়মকানুন মেনে চলে না। তাই নিয়ম মেনে চলার জন্যই নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকায় তালিকাভুক্ত নতুন বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা চলতি বছর ৬ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ কমেছে। এ দেশের অনেক কলেজ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা। যারা প্রায়শই পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্যাম্পাস ও শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে।
ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু নিউজার্সিতে প্রায় ২৩ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। নিউজার্সিতে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই চীন ও ভারত থেকে আসা। শুধু এই অঙ্গরাজ্যের ৬৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী আসে মূলত এই দুই দেশ থেকে।