ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো বলেছেন, আমাজনের ব্রাজিলের অন্তর্ভুক্ত অংশ একেবারেই সার্বভৌম। আমাজন বনাঞ্চলকে বিশ্বের ফুসফুস দাবি করাও ‘ভুল ধারণা’ বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে এর সপক্ষে কোনো যুক্তি তিনি তুলে ধরেননি।
বোলসোনারোর সরকার স্থানীয় কৃষকদের আমাজনে আগুন দিতে উৎসাহ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন পরিবেশবাদীরা। এর বিপরীতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি অবমাননাকর মন্তব্য করেন।
আমাজনের প্রায় ৬০ শতাংশ অবস্থিত ব্রাজিলে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এবং অন্যদের মতে, ২০১৯ সালের মতো এত ভয়াবহ আগুনে কখনো পোড়েনি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই বনাঞ্চল।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, বোলসোনারোর নীতিগত ত্রুটির কারণে এ বছর আগুনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর কৃষিকাজ ও খনিজ শিল্পের জন্য বনাঞ্চল বর্ধনের প্রতিশ্রুতি দেন বোলসোনারো। তাঁর এ উদ্যোগের ফলে বন উজাড় হয়ে যেতে পারে—আন্তর্জাতিক মহলের এমন উদ্বেগ তিনি উপেক্ষা করে গেছেন। এরপর থেকে দাবানলের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে অংশ নিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। সেখানে তিনি আমাজন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সমালোচনা করেছেন।
জাইর বোলসোনারো বলেন, প্রতারণামূলক তথ্য ব্যবহার করে কিছু দেশ তাদের সাহায্য করার পরিবর্তে উপনিবেশবাদী চেতনার আদলে অসম্মানজনক আচরণ করেছে। তারা এমনকি ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সার্বভৌমত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বোলসোনারো সুইডিশ পরিবেশবাদী কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের বক্তৃতার পরদিন জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দেন। জাতিসংঘে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব নেতার সামনে সাহসী গ্রেটা বলে, ‘আপনারা আমাদের স্বপ্ন ও শৈশব হরণ করেছেন। বিশ্বের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। আর আপনারা শুধু অর্থ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গালগল্প করে যাচ্ছেন।’
ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীদের রক্ষায় তাঁর সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোকে সমর্থন জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অনেকেই তাঁর নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
ব্রাজিলজুড়ে আট লাখের বেশি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বাস। এরা ব্রাজিলের মোট অঞ্চলের প্রায় ১২ শতাংশ এলাকায় বাস করে। ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বেশির ভাগই আমাজন অঞ্চলের অধিবাসী। তাদের কিছু গোষ্ঠী এখনো বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনো প্রকার যোগাযোগ নেই।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করা বোলসোনারো বারবার প্রশ্ন করেন, ব্রাজিলের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত এ অঞ্চলগুলো কি এভাবেই চলবে? তিনি উল্লেখ করেন, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সংখ্যার তুলনায় সেখানে অনেক বেশি জমি খালি পড়ে আছে। খননকাজ ও কৃষিকাজের জন্য প্রেসিডেন্টের এ অঞ্চল ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বোলসোনারোর নিউইয়র্ক সফরের প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। আমাজন অঞ্চলকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট আমাজনে আগুনের দায় চাপান বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) ওপর। তাঁর ভাষ্য, তাঁর সরকার এনজিওগুলোর অর্থায়ন কমিয়ে দেওয়ায় প্রতিশোধ নিতে তারা এই আগুন লাগিয়েছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ব্রাজিল সরকারের একটি গোপন নথি থেকে জানা যায়, আমাজন অঞ্চলকে বহুপক্ষীয় সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে যে প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে, তা বাস্তবায়নের বিরোধী বোলসোনারোর সরকার। গত জানুয়ারিতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া বোলসোনারো এই প্রকল্প রুখতে কৌশলগতভাবে আমাজন এলাকা ‘দখল’ করতে চান। আর এ জন্য তিনি ওই এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করার পক্ষে। নথিতে বলা হয়, তথাকথিত সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক যে চাপ, তা মোকাবিলায় দেশের বাকি অঞ্চলগুলোর সঙ্গে আমাজন অঞ্চলকে একীভূত করতে হবে। এর জন্য আমাজন অববাহিকায় অবশ্যই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। বাস্তবায়ন করতে হবে ট্রমবেটাস নদী জলবিদ্যুৎকেন্দ্র, আমাজন নদীর ওপর সেতু এবং সুরিনামের সঙ্গে ব্রাজিলকে সড়কপথে যুক্ত করতে মহাসড়ক প্রকল্প।