আফগানিস্তান থেকেও সেনা সরাবে যুক্তরাষ্ট্র

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা। ছবি: রয়টার্স
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা। ছবি: রয়টার্স

সিরিয়ার পর আফগানিস্তান থেকেও সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে মোতায়েন ১৪ হাজার সেনার মধ্যে প্রায় অর্ধেককে কয়েক মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের খবর প্রকাশের এক দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে বুধবার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে সব মার্কিন সেনা তুলে নেওয়ার প্রস্তুতির কথা জানা যায়। তবে কবে নাগাদ সেনা তুলে নেওয়া শুরু হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীকে পরাজিত করা হয়েছে, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সিএনএনের খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকেও সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এসব সিদ্ধান্তের জের ধরেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।
কত সংখ্যক সেনা প্রত্যাহার করা হবে তা নিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, প্রায় সাত হাজার সেনা তুলে নেওয়া হবে। আর রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ১৪ হাজার সেনার মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি সেনাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

খবরে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ ও বিদেশে সামরিক হস্তক্ষেপে ট্রাম্পের ধৈর্য কমে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার ট্রাম্প এ ব্যাপারে তাঁর শীর্ষ উপদেষ্টাদের মতামত অগ্রাহ্য করে সিরিয়া থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের শরিক দেশগুলো হতভম্ব হয়ে পড়ে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। নীতিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ব্যাপক মতপার্থক্যের কারণে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস হঠাৎ পদত্যাগ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কূটনৈতিক শান্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ম্যাটিস আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার শক্ত উপস্থিতি চেয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস। ছবি: রয়টার্স

সূত্রমতে, মৌখিক নির্দেশেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়েছে। কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে তা ঘটতে পারে। তবে এটা স্পষ্ট করা হয়নি, অর্ধেক সংখ্যক সেনা কমিয়ে দেওয়ার পর আফগানিস্তানে আফগান সেনা প্রশিক্ষণ, যুদ্ধের ময়দানে পরামর্শ, তালেবানসহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর কার্যক্রম কীভাবে করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে তালেবানরা আফগানিস্তানজুড়ে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তৃত করার সুযোগ পেতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে জানা গেছে, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন নতুন পরিকল্পনার ছক কষবে বলে সতর্ক করেছে পেন্টাগন।
দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র গ্যারেট মারকুইস বলেছেন, ভবিষ্যতের কৌশলগত উন্নয়ন নিয়ে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করবে না।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ওই বছর আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করে। ওই হামলার অভিযোগে ওসামা বিন লাদেনের খোঁজে ওই যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ এ মুহূর্তে তালেবানদের সঙ্গে আলোচনায় সম্পৃক্ত ছিল। তালেবানরা আফগানিস্তানের বড় একটি অংশজুড়ে মজবুত ঘাঁটি গড়ে তুলেছে।
মার্কিন সরকারের প্রতিবেদন অনুসারে, গত তিন বছরে তালেবান বিদ্রোহীরা তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে। দেশটির ৫৬ শতাংশ অঞ্চল আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যেখানে ২০১৫ সালে ৭২ শতাংশ অঞ্চলে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল।

১৭ বছরের আফগান যুদ্ধে ২ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছে।