আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সীমিত পদক্ষেপে সিনেটরদের সমঝোতা

আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবিতে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন
ছবি: রয়টার্স

আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সম্ভাব্য আইনের রূপরেখার বিষয়ে একমত হয়েছেন মার্কিন সিনেটরদের একটি অংশ। তাঁদের মধ্যে উভয় দলের সিনেটররা রয়েছেন। খবর বিবিসির।

যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক নির্বিচারে গুলিতে হতাহত হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষাপটে মার্কিন সিনেটের উভয় দলের সদস্যদের একটি অংশের মধ্যে এমন সমঝোতা হলো।

সমঝোতার অংশ হিসেবে ২১ বছরের কম বয়সী অস্ত্র ক্রেতাদের ক্ষেত্রে কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় সিনেটরদের সমর্থন থাকবে। অবৈধ অস্ত্র ক্রয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও সিনেটরদের সমর্থন থাকবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—প্রস্তাবটিতে ১০ জন রিপাবলিকান সিনেটরের সমর্থন আছে। যার অর্থ, প্রস্তাবটি আইন হিসেবে পাস করার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোট এখন রয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট। ১০০ সদস্যের সিনেটে এখন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সংখ্যা সমান। সিনেটে কোনো আইন পাসে ৬০টি ভোটের প্রয়োজন হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়নের উদ্যোগ কংগ্রেসে প্রয়োজনীয় সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছিল।

দুই দলের সিনেটরদের নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, পরিকল্পনাটি সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার পদক্ষেপ। তবে বাইডেন যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, তার অনেক কিছুই এই পরিকল্পনায় নেই।

সাম্প্রতিক দুটি নির্বিচারে গুলির ঘটনার প্রেক্ষাপটে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবিতে গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন।

সমঝোতায় আসা সিনেটররা এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের সুরক্ষা, স্কুলগুলোকে নিরাপদ রাখা ও দেশজুড়ে সহিংসতার হুমকি কমাতে আজ তাঁরা যৌক্তিক অবস্থানে পৌঁছার একটি দ্বিদলীয় প্রস্তাব ঘোষণা দিচ্ছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন পরিবারগুলো ভীতসন্ত্রস্ত। এ অবস্থায় সমঝোতায় আসা, কিছু একটা করা তাঁদের দায়িত্ব, যা পরিবারগুলোর মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনবে। সমাজে নিরাপত্তা ফেরাবে।

মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ও স্কুলের নিরাপত্তা সরঞ্জামে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এই সিনেটররা।

প্রস্তাবটি দ্রুত পাস করতে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যেমনটা তিনি চেয়েছিলেন, প্রস্তাবটি সেভাবে করা হয়নি।

আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বড় ধরনের সংস্কার আনার পক্ষে। তার মধ্যে অ্যাসল্ট রাইফেল নিষিদ্ধ করা অন্যতম। এ ধরনের অস্ত্র টেক্সাস ও বাফেলোতে নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছিল। অথবা অন্তত অস্ত্র কেনার বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে বাইডেন।

এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, স্পষ্টতই এখানে সবকিছু আসেনি, যা তিনি প্রয়োজন মনে করেছিলেন। তবে সঠিক পথে এগোনোর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এই প্রস্তাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এটি কংগ্রেসে পাস হলে তা হবে কয়েক দশকের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপত্তা আইন।

সিনেটে ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা চাক শুমার বলেন, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পরিকল্পনাটি ভালো। আইনের বিস্তারিত প্রস্তুত হলে তিনি সিনেটে ভোটাভুটির জন্য একটি বিল দ্রুত উত্থাপন করতে চান।

সিনেটে রিপাবলিকান দলীয় নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, এই পদক্ষেপ সংলাপ ও সহযোগিতার মূল্যবোধ সামনে এসেছে। সমঝোতার খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন কয়েকজন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনকর্মী।

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ড স্কুলে বন্দুক হামলা থেকে বেঁচে যান ডেভিড হগ। আগ্নেয়াস্ত্র সহিংসতা প্রতিরোধে গঠিত ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। পার্কল্যান্ডের স্কুলে ওই হামলায় ১৭ জন নিহত হন।

এক টুইটে হগ বলেন, এটি প্রথম পদক্ষেপ। তিনি যা ভেবেছিলেন, তার চেয়ে এটা আসলেই বেশি কিছু। ছোট হলেও এই পদক্ষেপের মূল্য আছে।

গত ২৪ মে টেক্সাসের একটি স্কুলে নির্বিচার বন্দুক হামলায় ১৯ শিশুসহ ২১ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে নিউইয়র্কের বাফেলোয় একটি সুপারমার্কেটে অপর এক বন্দুক হামলায় ১০ জন নিহত হন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবি নতুন করে গতি পায়।