ঘরবন্দী ১২ দিন। বসা আর শোয়ার ঘরের মধ্যেই চলাফেরা সীমিত। ষাটোর্ধ্ব বয়সে যথা সম্ভব রোগ মুক্ত থাকার নিয়ম আর চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলছি ঘড়ি ধরে। সময় কাটানোর জন্য অধিকাংশ সময় থাকছি ফেসবুক বা টিভির সামনে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিয়ম করে ঘুম নাকি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই নিয়ম করে ঘুমানোর এত দিন চলে আসা অভ্যাস আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বসার ঘরে টিভিতে দুনিয়া জোড়া করোনার তাণ্ডবের খবরে মানসিক-শারীরিক অবসাদ এলে, মনে হয় যাই খানিক সময় ঘুমালে মগজ ফ্রেশ হতে পারে। তা আর হচ্ছে? চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসে স্বজনদের প্রিয় মুখ। সঙ্গে নিজের পরিবারের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাসহ আগামী দিন নিয়ে কত-না আশঙ্কা।
কিছু চেষ্টা করলাম টেলিফোন থেকে দুরে থাকতে। এই চেষ্টাতেও ব্যর্থ। বারবার মনে হয়, যাই দেখি ফেসবুক লগইন করি। হয়তো কেউ জানাবে, কমে আসছে প্রাণঘাতী করোনায় মৃত্যুর খবর। দেশ থেকে ফোন আসে স্বজন ও পরিচিতদের। উৎকণ্ঠা নিয়ে জানতে চান মৃত্যুপুরী নিউইয়র্ক শহরে কেমন আছি? এই ডিজিটাল যুগে সারা দুনিয়ার খবরের জন্য আর অপেক্ষা করতে হয় না। বরং আমরা নিউইয়র্কে থেকে যে খবর সময় মতো পাই না, দেশের মানুষ তা আগে ভাগেই জেনে আমাদের জানাচ্ছেন। দুই সপ্তাহের জন্য কিনে রাখা মাছ মাংসের মজুত কমতে শুরু করছে বলে জানালেন স্ত্রী।
টেলিফোনে জানাশোনা স্থানীয় গ্রোসারি শপে কল দিয়ে কোনো জবাব না পেয়ে টেনশন আরও বেড়ে গেল। পরে নানা সূত্রে জানা গেল, জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউর সব দোকান গত দুদিন থেকে বন্ধ আছে।
এরই মধ্যে ১ এপ্রিল দুপুরে নিউইয়র্কের হেলথ অ্যান্ড হসপিটালের সিও মিচ কেটেজ এক সংবাদ সম্মেলনে জিপ কোড ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানালেন।
প্রদর্শিত নগরীর মানচিত্রে দেখানো হয়, নগরীর ৬৮টি জিপ কোডের মধ্যে আমার বাসার জিপ কোড ১১৪৩২। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৬ থেকে এক হাজারের কাছাকাছি। কুইন্স বরোর জ্যামাইকার এই অঞ্চলে করোনার প্রকোপ বেশি হওয়ার জন্য সিও মিচ কেটেজ এলাকার ঘন বসতি ও গাদাগাদি করে বাস করার অভ্যাসকে দায়ী করেন। এ ছাড়া লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব বজায় নিয়ম যথাযথ না মানায় করোনাভাইরাসের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটেছে।
এখনো পর্যন্ত আমার বাসার আশপাশে অ্যাম্বুলেন্সের তৎপরতা তুলনামূলক কম থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতি সত্যি অনেক ভয়ানক। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের খবর হলো, কুইন্সের সব হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা বলতে এখন আর কিছুই নেই।
নিউইয়র্কের একজন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি চিকিৎসকের নেতৃত্বে একটি পরামর্শ প্যানেল কাজ শুরু করেছে। তাঁরা বারবার বলছেন, জ্বর, সর্দি বা কফসহ কোনো লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে যাওয়ার আগে প্যানেলভুক্ত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
পরিচিত অপরিচিতদের ফোনালাপ আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ দেশ-বিদেশের টিভির সামনে বসে একটি খবর শুনতে চাই। আগামী আরও কয়েকটি বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের শুরুতে বাংলা বঙ্গাব্দের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিনে যেন গাইতে পারি—‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।