সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল এই অনুমোদন দিয়েছেন বলে আজ শুক্রবার তাঁর দপ্তর নিশ্চিত করেছে। অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে সেখানে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে তাঁর ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
অ্যাসাঞ্জ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের একটি কারাগারে রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি কারাগারেই বিয়ে করেন। যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করার জন্য দেশটির আইন মন্ত্রণালয় অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের ১৮টি অভিযোগ আনে। দেশটির দাবি, উইকিলিকস তথ্য ফাঁস করায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেকের জীবন সংকটে পড়েছে।
তবে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকেরা বলছেন, অ্যাসাঞ্জ একজন ‘এস্টাব্লিশমেন্ট বিরোধী’ নায়ক। তিনি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার শিকার। আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যায় কার্যক্রমকে প্রকাশ্যে এনে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের বিরাগভাজন হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা সাংবাদিকতা ও বাক্স্বাধীনতার ওপর হামলা।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও হাইকোর্ট—উভয়ের রায় বিবেচনায় নিয়ে ১৭ জুন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেওয়া হলো। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে অ্যাসাঞ্জ ১৪ দিন সময় পাবেন।
প্রীতি প্যাটেলের এই আদেশের অর্থ এই নয় যে প্রায় এক দশক ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের সব আইনি পথ অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত অ্যাসাঞ্জের জন্য এখনই বন্ধ হয়ে গেল। তিনি চাইলে এবং আদালতের অনুমতি পেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই অনুমোদনের বিরুদ্ধে লন্ডন হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন। সেখানে যদি ব্যর্থ হন, তাহলে বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারবেন তিনি। তবে তাঁর আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে ২৮ দিনের মধ্যে অ্যাসাঞ্জসকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে হবে।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধসংক্রান্ত পাঁচ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে উইকিলিকস। এতে যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে সাত বছর ধরে ইকুয়েডরের লন্ডন দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ।
গত মার্চে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে রায় দেন। এরপরই অ্যাসাঞ্জ কারাগারে তাঁর বাগ্দত্তা স্টেলা মরিসকে বিয়ে করেন। অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে না পাঠানোর জন্য প্রীতি প্যাটেলের কাছে অনুরোধ করেছিলেন স্টেলা। কিন্তু স্টেলার অনুরোধ রাখলেন না প্রীতি।
আরও পড়ুন: অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে দেওয়ার আদেশ