প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক অজ্ঞাতনামা বিদেশি নেতার কথোপকথন নিয়ে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যে বাদ-বিবাদ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
এই প্রশ্নে বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির সামনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রশ্নের মুখোমুখি হন গোয়েন্দাবিষয়ক প্রশ্নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল। কিন্তু সেই আলাপচারিতার বিষয়ে মুখ খুলতে তিনি সম্মত হননি।
সন্দেহ করা হচ্ছে, ট্রাম্পের কথাবার্তা সম্ভবত ইউক্রেনের নতুন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গেই হয়েছে।
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ইউক্রেন। যাঁর সঙ্গেই আলোচনা হোক, তাঁকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কিছু বলেছিলেন বা এমন কোনো আশ্বাস দিয়েছিলেন, যা সেই বক্তব্যের সঙ্গে পরিচিত কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে এতটা বিচলিত করে যে, তিনি বিষয়টি গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেলকে অবহিত করেন।
বিদেশি নেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সব সরকারি টেলিফোন আলাপ নথিবদ্ধ করার লক্ষ্যে তা শোনা হয়ে থাকে। সে কথাবার্তা শোনা বা তা পড়ার পর হোয়াইট হাউসের ভেতরে বা গোয়েন্দা বিভাগের কেউ একজন এতটা বিচলিত হয়ে পড়েন যে, তিনি বিষয়টি গোয়েন্দা বিষয়ক ইন্সপেক্টর জেনারেলের দৃষ্টিগোচর করেন।
মার্কিন আইন অনুসারে যেকোনো বড় ধরনের অনিয়ম বা আইন লঙ্ঘন বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার লক্ষ্যে ‘হুইসেলব্লোয়ার’ আইন রয়েছে, যার অধীনে যাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন, তাঁদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। কোনো অজ্ঞাতনামা সতর্ককারী বা হুইসেলব্লোয়ারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল তার গুরুত্ব অনুধাবন করেন। তা যথারীতি জাতীয় নিরাপত্তা দপ্তরগুলোর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী পরিচালককে অবহিত করেন।
আইনত সে তথ্য কংগ্রেসের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সমন্বয়কারী পরিচালকের। কিন্তু ট্রাম্পের অনুগত হিসেবে পরিচিত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জোসেফ ম্যাগুয়্যার বিষয়টি কংগ্রেসের কাছে খোলাসা করতে ব্যর্থ হন। তাই গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটি গোয়েন্দাবিষয়ক ইন্সপেক্টর জেনারেল ও সমন্বয়কারী পরিচালককে কংগ্রেসের সামনে প্রশ্নোত্তরে ডেকে পাঠায়। এই নির্দেশের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ইন্সপেক্টর জেনারেল মাইকেল এটকিনসন গোয়েন্দা কমিটির সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেন। আগামী সপ্তাহে জোসেফ ম্যাগুয়্যারের অনুরূপ প্রশ্নোত্তরে অংশ নেওয়ার কথা।
এটকিনসন কার সঙ্গে কোন বিষয়ে আলাপ প্রসঙ্গে সতর্কীকরণ বার্তা পেয়েছেন, কংগ্রেসকে তা জানাতে অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে বিচার বিভাগ ও হোয়াইট হাউস তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিতর্কের কেন্দ্রে যে ট্রাম্প, সে কথাও তিনি জানাননি।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ট্রাম্প নিজেই এক টুইটে জানান, তিনি নিয়মিত বিশ্বের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তাঁদের সঙ্গে তিনি অসংগত কোনো কথা বলবেন, তার প্রশ্নই ওঠে না। এটিও একটি ‘ফেইক নিউজ’ বলে তিনি উড়িয়ে দেন।
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, যে সময় এই টেলিফোনের বিষয়টি ইন্সপেক্টর জেনারেলের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়, তার দুই সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্প যেসব বিদেশি নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে ইউক্রেনের নতুন প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি রয়েছেন।
আলাপচারিতা জেলেন্সকির সঙ্গে হলে তার একটি ভিন্ন রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকতে পারে। ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসায়িক সূত্রে জড়িত ছিলেন। বাইডেনের প্রভাব ব্যবহার করে তিনি বড় ধরনের অনিয়ম করেছেন, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি এ কথা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের জন্য জুলিয়ানি ইউক্রেনের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করেছেন কি না, কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা এই মুহূর্তে তা খতিয়ে দেখছেন।
ডেমোক্র্যাটরা অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে ট্রাম্প নিজে সে দেশের জন্য সাহায্য হিসেবে অনুমোদিত ২৫০ মিলিয়ন ডলার আটকে রাখার হুমকি দিয়েছেন।
সন্দেহ করা হচ্ছে, ট্রাম্প হয়তো সে বিষয়েই জেলেন্সকির সঙ্গে কোনো কথা বলে থাকবেন, যা ইন্সপেক্টর জেনারেলের বিবেচনায় জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।
গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির প্রধান কংগ্রেস সদস্য এডাম শিফ জানিয়েছেন, আসলে কী হয়েছে, তা বের করতে তাঁর কমিটি বদ্ধপরিকর।