সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের মালিকানা কেনার পর সেখানে গণহারে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। গতকাল শুক্রবার তিনি বলেছেন, প্রতিদিন কোম্পানি লাখো ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমন অবস্থায় ছাঁটাই করা ছাড়া উপায় নেই। খবর এএফপির
গত ২৭ অক্টোবর ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার কেনেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। মালিকানা নেওয়ার পর মাধ্যমটির ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা শুরু করেন তিনি। এর অংশ হিসেবে মাস্ক টুইটারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করতে শুরু করেন। শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী এবং অর্থ ও আইন বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিদায় দেন মাস্ক। ভেঙে দেন পরিচালনা পর্ষদ। জারি করেন ১২ ঘণ্টা অফিস ও ছুটিহীন অফিস নীতি।
গতকাল টুইটার কর্তৃপক্ষ কোম্পানির সাড়ে সাত হাজার দক্ষ কর্মীর অর্ধেককে বরখাস্ত করেছে।
টুইটারের অভ্যন্তরীণ একটি নথির বরাতে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, কোম্পানিটির ৫০ শতাংশের মতো কর্মীর ওপর ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে। জরুরি ভিত্তিতে কোম্পানির কম্পিউটার ও ই–মেইলে তাঁদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিশ্বজুড়ে টুইটারের কর্মীরা টুইট করে হতাশা প্রকাশ করছেন। টুইটারের যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জননীতিবিষয়ক পরিচালক মিশেল অস্টিন বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে খবর পেলাম, টুইটারে আমার কর্মজীবনের অবসান হচ্ছে। আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমি এটা মানতে পারছি না।’
গতকাল প্রথমবারের মতো ছাঁটাইয়ের কারণ ব্যাখ্যা করেন ইলন মাস্ক। এদিন সন্ধ্যায় এক টুইটার পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘টুইটারের জনবল কমানোর প্রসঙ্গে বলতে চাই, দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোম্পানির যখন দিনে ৪০ লাখ ডলার ক্ষতি হচ্ছে, তখন আর অন্য উপায় নেই। যাঁদের ছাঁটাই করা হচ্ছে, তাঁদের তিন মাসের সময় দেওয়া হবে।
আইনগতভাবে যতটুকু সময় দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তার চেয়ে ৫০ শতাংশ সময় বেশি পাবেন তাঁরা।’
আসন্ন ছাঁটাই সম্পর্কে অবহিত করে কোম্পানির পক্ষ থেকে কর্মীদের প্রাথমিকভাবে ই–মেইল পাঠানোর ২৪ ঘণ্টা পর মাস্ক এমন মন্তব্য করলেন।
ছাঁটাইকে সামনে রেখে টুইটার কর্তৃপক্ষ বিশ্বজুড়ে নিজেদের কার্যালয়গুলোতে কর্মীদের যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কর্মীদের বাড়িতে থেকে নিজেদের ভাগ্যনির্ধারণী ই–মেইলের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছে তারা।
টুইটারের বরখাস্ত এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এটি মানুষের সঙ্গে সম্পূর্ণ মানবেতর আচরণ।’ তিনি মনে করেন, টুইটারের নতুন মালিক যেকোনোভাবেই হোক অর্থ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
গতকাল আরেকটি টুইটার পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, কোম্পানির রাজস্ব অনেক কমে গেছে। এর জন্য অধিকার আন্দোলনের সংগঠনগুলোকে দায়ী করেছেন তিনি। কারণ, তারা বিজ্ঞাপনদাতাদের ওপর চাপ তৈরি করছে।
মাস্ক বলেন, ‘অধিকারকর্মীদের শান্ত করতে আমরা সাধ্যমতো সবকিছু করেছি। কিন্তু বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে চাইছে।’