চার দশক আগে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের এসএস-২০এস ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্টা হিসেবে ইউরোপে ক্রুজ ও পেরশিং-২ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনা। অবশ্য কয়েক বছরের মধ্যে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঐতিহাসিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি হয়।
১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে এই চুক্তির বিষয়ে সম্মত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানকে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ বলেছিলেন, ‘এই চারাগাছ লাগানোর বিষয়ে আমরা গর্বিত হতে পারি, যা একদিন শান্তির মহিরুহে পরিণত হবে।’
চুক্তি অনুযায়ী প্রতিপক্ষকে লক্ষ্যবস্তু করে স্থলভাগে মোতায়েন করা ৫০০ থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পাল্লার সব ধরনের স্বল্প ও আন্তমহাদেশীয় পাল্লার পারমাণবিক ও প্রথাগত অস্ত্র বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিবদমান দুটি পক্ষ একমত হয়।
শান্তির এই ক্ষুদ্র বৃক্ষটি বেঁচে ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত, যখন তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাশিয়া এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, যদিও মস্কো সেটা অস্বীকার করে।
তবে এই সিদ্ধান্তের ঝুঁকিপূর্ণ প্রভাব এখন আরও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ই নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনে নিজেদের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছে।
গত ২৮ জুন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, মস্কো স্থলভাগে মোতায়েনের স্বল্প ও আন্তমহাদেশীয় পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন শুরু করেছে। আর প্রয়োজন হলে সেগুলো কোথায় মোতায়েন করা হবে, সে সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি।
এরপর ১০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে জার্মানিতে অস্ত্র মোতায়েন শুরু হবে, যেসব অস্ত্রের মধ্যে এসএম-৬ ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রও থাকবে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র আগে মূলত যুদ্ধজাহাজে মোতায়েন করা হতো। এ ছাড়া নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও মোতায়েন করা হবে।
এসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রথাগত অস্ত্রের জন্য ব্যবহার করা হলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্রে পারমাণবিক অস্ত্র যুক্ত করা সম্ভব। রাশিয়ার পরিকল্পনায় এ ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ঘিরে অত্যন্ত উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে পুতিনের হুমকির বিষয়েও নজর রয়েছে পশ্চিমাদের। উভয় পক্ষের মধ্যে নানা পর্যায়ে থাকা জটিল হুমকিগুলোতে এটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের বৈশ্বিক ঝুঁকিবিষয়ক পরিচালক জন উলফসথাল বলেন, বাস্তবতা হলো, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা তাদের নিরাপত্তা বাড়াবে বলে তারা মনে করছে। সেটা অন্যের নিরাপত্তাহীনতার বিনিময়ে হচ্ছে কি না, সে বিবেচনা তারা করছে না।’