ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা রোধ এবং ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দিতে ইসরায়েলকে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। গতকাল শুক্রবার আইসিজের দেওয়া এই প্রাথমিক আদেশ অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ আইনি ও নৈতিক বিজয়। তবে অন্যদের কাছে এটা যথেষ্ট ছিল না।
গাজায় ইসরায়েল গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এমন অভিযোগ এনে হেগের আদালতে মামলাটি করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একই সঙ্গে নয়টি অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের আবেদন করেছিল দেশটি। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির মূল দাবি ছাড়া এসব আবেদনের অনেকগুলোই আদালত আমলে নিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দখলকৃত ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বিতর্কিত আত্মরক্ষার অধিকারের যুক্তির কারণে আদালতের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির আদেশ দেওয়ার সম্ভাবনা কোনো সময়েই তেমন ছিল না।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আইনের প্রভাষক জুলিয়েট ম্যাকইনটায়ার বলেন, ‘আমার কখনোই মনে হয়নি, আদালত যুদ্ধবিরতির আদেশ দিতে যাচ্ছেন।’
ম্যাকইনটায়ার বলেন, ‘আদালত বলছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের চূড়ান্ত পর্যায়টা কী, সে প্রশ্নে আমরা যুক্ত হতে পারি না। তাই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আমরা কোনো কিছু বলতে যাচ্ছি না।’
আদেশে লক্ষণীয়ভাবে ‘আত্মরক্ষা’ শব্দটির উল্লেখ ছিল না। গাজার অবনতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে এতে জোর দেওয়া হয়েছে।
আদালতের আদেশকে ‘বড় বিজয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পান্দোর। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার এই শীর্ষ কূটনীতিক বলেছেন, আদালত স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাবেন—এমনটা চেয়েছিলেন তিনি।
অনেক ফিলিস্তিনির জন্য আদালতের এই আদেশ ছিল অম্লমধুর, বিশেষ করে গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য। ইসরায়েলের দখলে থাকা পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা লেখক মোহাম্মদ আল-কুর্দ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, গাজায় অবিলম্বে অবশ্যই সামরিক অভিযান স্থগিত করবে ইসরায়েলি রাষ্ট্র—দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের অনুরোধ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন আইসিজে। অবাক হওয়ার কিছু নয়, তবে বিষয়টি যন্ত্রণা দিচ্ছে।
অবশ্য অন্যরা মনে করছেন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ছাড়া আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। যেমন ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধসহ গণহত্যা সনদের লঙ্ঘন এড়াতে ইসরায়েলকে তার ক্ষমতার আওতায় অবশ্যই সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আদেশের পর আদালত চত্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি ছাড়া আপনি কীভাবে ত্রাণ ও পানি সরবরাহ করবেন। আপনি যদি আদেশটি পড়ে দেখেন, অবশ্যই যুদ্ধবিরতিতে যেতে হবে—এমন ইঙ্গিত রয়েছে।’
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার সংগঠন বেইতসালেমও এর সঙ্গে একমত। সংগঠনটি বলেছে, দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের জারি করা আদেশগুলো কার্যকর করার একমাত্র উপায় হলো অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া। যত দিন যুদ্ধ চলতে থাকবে, তত দিন বেসামরিক লোকজনের জীবন রক্ষা করা সম্ভব নয়।