সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল সোমবার হামলার এসব ঘটনায় কয়েক শ শিক্ষার্থী আহত হন। আজ মঙ্গলবার সর্বশেষ খবরে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রংপুরে সহিংসতায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরে চলা এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি, রয়টার্স ও এপি, আল-জাজিরা, বিবিসি, এনডিটিভিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গতকাল সোমবার মারাত্মক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, সমালোচকদের দাবি, এই ব্যবস্থায় (কোটা) সরকার-সমর্থকদের সন্তানেরাই বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। আল-জাজিরার সর্বশেষ প্রতিবেদনে এক ছাত্রীর বক্তব্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটনা সরেজমিনে তুলে ধরা হয়।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে (এপি) আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে।
কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা সহিংসতায় আহত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা আলী বিন সোলায়মান।
বাংলাদেশ পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, সোমবারের সংঘর্ষে ১০০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ইট-পাথর নিক্ষেপ এবং লাঠি ও রড নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়। কারও হাতে ছিল চাপাতি, কেউ নিক্ষেপ করেছেন পেট্রলবোমা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এএফপিকে বলেন, ‘তাঁরা (ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা) আমাদের নারী আন্দোলনকারীদের মেরেছেন। অন্তত দেড় শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
‘বাংলাদেশ সরকার কেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে পারছে না’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে দ্য ডিপ্লোমেট। সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সড়কে আন্দোলন করছেন। ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের হুমকি-ভয়ভীতি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।
শেখ হাসিনা সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদে কোটা সংস্থার আন্দোলনকে সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্য, চলতি মাসের শুরুর দিকে এই আন্দোলন শুরু হয়। হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দিলে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
কয়েক দিন আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিবিসিতেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটা নিয়ে ক্ষোভ’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভালো বেতনকাঠামোর জন্য বাংলাদেশে সরকারি চাকরি বহুল প্রত্যাশিত। তবে সরকারি চাকরিতে মোট পদের অর্ধেকের বেশি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু খবরে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সায়ীদ (২৫) নিহত হয়েছেন। ওই সংঘর্ষে আরও অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য প্রিন্ট, টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সংঘর্ষের ঘটনা উঠে এসেছে। সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে এসব গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়।