ফুটবলের বাইরে নানামুখী সামাজিক-মানবিক কাজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন সদ্যপ্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে। এসব কাজের মাধ্যমে তিনি সমাজে ইতিবাচক অবদান রেখেছেন।
তিনবার বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলের ‘রাজা’ হিসেবে খ্যাত পেলে গতকাল বৃহস্পতিবার ৮২ বছর বয়সে মারা যান। ফুটবলের মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরে যাওয়ার পর তিনি নানা সামাজিক-মানবিক কাজ করেন।
পেলে ১৯৭৪ সালে ফুটবল থেকে প্রথম অবসরের ঘোষণা দেন। তবে ১৯৭৫ সালে তিনি আবার ফুটবলের মাঠে ফেরেন। এই দফায় তিনি উত্তর আমেরিকা ফুটবল লিগে নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলতে চুক্তিবদ্ধ হন। তিনি ১৯৭৭ সালে নিউইয়র্ক কসমসকে লিগ চ্যাম্পিয়ন করেন। একই বছর তিনি অবসরে যান।
অবসরের যাওয়ার পরও পেলে ছিলেন বিশ্ব তারকা। ইউনিসেফের সঙ্গে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে সংস্থাটি ১৯৭৮ সালে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’ দেয়।
১৯৯২ সালে জাতিসংঘের বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশবিষয়ক দূত হন পেলে। তিনি ১৯৯৪ সালে ইউনেসকোর শুভেচ্ছাদূত হন।
১৯৯৫ সালে পেলে ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ব্রাজিল ফুটবলকে দুর্নীতিমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ নেন।
ব্রাজিল ফুটবলে দুর্নীতি রুখতে পেলের উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে একটি আইন পাস হয়। এটিকে অনেকে ‘পেলে আইন’ নামে অভিহিত করেন।
পেলে ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে সম্মানজনক নাইট উপাধি পান।
ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় পেলের অংশগ্রহণ ছিল। তিনি ২০১২ সালে লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আয়োজিত ‘অলিম্পিক হাঙ্গার সামিটে’ অংশ নিয়েছিলেন।
মানবিক ও পরিবেশগত বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য অর্জনের জন্য ২০১২ সালে পেলেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়।
পেলে তাঁর অবসর-পরবর্তী জীবনে নানা দাতব্যকাজে সাহায্য-সহযোগিতা-সমর্থন দিয়ে গেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল অ্যাকশন ফর ব্রাজিল’স চিলড্রেন, গোল পেলা ভিদা, এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজেস, দ্য লিটলেস্ট ল্যাম্ব, প্রিন্সেস রেইনফরেস্ট প্রজেক্ট।
দাতব্যকাজের উদ্দেশ্যে পেলে তাঁর কয়েক দশকের সংগ্রহশালা থেকে ১ হাজার ৬০০টির বেশি সামগ্রী ২০১৬ সালে নিলামে তুলেছিলেন। এই নিলাম থেকে তিনি ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
২০১৮ সালে পেলে তাঁর নিজের দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ‘পেলে ফাউন্ডেশন’ নামের এই সংস্থা সারা বিশ্বের দরিদ্র ও অধিকারবঞ্চিত শিশুদের ক্ষমতায়নে কাজ করে থাকে।
সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, বিজনেস ইনসাইডার, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা