ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো ২০২২ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দিতে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ সহযোগীদের নিয়ে এ পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের করা অভিযোগে পুলিশ এসব কথা বলেছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বলসোনারোর সমর্থকেরা ব্রাসিলিয়ায় সহিংসতা চালিয়েছিল। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা দায়িত্ব গ্রহণ করার এক সপ্তাহ পর ওই সহিংসতা হয়।
ওই সময়ে বিক্ষোভকারীদের অনেকে বলেছিলেন, একটি সামরিক অভ্যুত্থানকে ন্যায্য প্রমাণের জন্য তারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সামরিক অভ্যুত্থানকে অপরিহার্য বলে মনে করছিলেন তাঁরা।
লুলাকে হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে চলতি বছরের শুরুর দিকে পাঁচ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তে দেখা গেছে, বলসোনারো ওই পরিকল্পনার ব্যাপারে জানতেন। ওই তদন্ত–সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে বলসোনারো বলেছেন, তদন্তকারী ও মামলার তত্ত্বাবধানকারী সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ‘সৃজনশীল’ এবং ‘আইন যা বলে না তার সবকিছুই করেছেন’।
পুলিশের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আরও নিবিড়ভাবে দেখতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বলসোনারোর আইনজীবী রয়টার্সকে বলেছেন, প্রতিবেদনটি দেখার পরই তিনি (বলসোনারো) মন্তব্য করবেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের অভিযোগ দায়ের করার বিষয়টি বলসোনারোর জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। ২০২৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনাটি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
পুলিশের বিস্তারিত প্রতিবেদনটি গোপনীয়। ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, আগামী সপ্তাহে প্রতিবেদনটি দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেলের কাছে পাঠানো হতে পারে। বলসোনারো এবং অন্য ৩৬ জনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে সহিংসভাবে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ আনা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন।
ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় পুলিশ বলছে, তল্লাশি চালিয়ে, ফোনে আড়ি পেতে, আর্থিক নথিপত্র ঘেঁটে এবং আসামিদের দোষ স্বীকার করে দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে তারা প্রমাণগুলো উপস্থাপন করেছে।
পুলিশের অভিযোগের তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে বলসোনারো ছাড়াও তাঁর সাবেক দুই প্রতিরক্ষামন্ত্রীও আছেন। অন্যদের মধ্যে আছেন ২০২২ সালের নির্বাচনে বলসোনারোর রানিং মেট অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওয়াল্টার ব্রাগা নেত্তো, তাঁর সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অগুস্তো হেলেনো, নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার আলমির গার্নিয়ার সান্তোস এবং সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যান্ডারসন টোরেস, আইনপ্রণেতা আলেক্সান্দ্রে রামাজেম।
হেলেনোর আইনজীবী এবং রামাজেমের সহযোগীরা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
ব্রাগা নেত্তো এবং টোরেসের আইনজীবীরা বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের প্রতিবেদন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা মন্তব্য করবেন না।
রয়টার্সের পক্ষ থেকে ব্রাজিলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গার্নিয়ার সান্তোস এবং নৌবাহিনীর প্রতিনিধিদের মন্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়নি।
দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, অন্য কর্তৃপক্ষের চলমানপ্রক্রিয়া নিয়ে তারা কথা বলে না।