ডানপন্থী নেতা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো এবং বামপন্থী প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা—গত রোববারের প্রথম দফা ভোটে কেউই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। তাই অক্টোবর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ হবে। এ দফায় লুলার জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। তবে এ জন্য লুলাকে সেসব ভোটারের মন জয় করতে হবে, যাঁরা প্রথম দফার ভোটে তাঁকে কিংবা বলসোনারোকে বর্জন করেছিলেন।
প্রথম দফার ভোটে লুলা পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। আর বলসোনারো পেয়েছেন ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ব্যবধান মাত্র ৫ শতাংশের। তবে সেদিন প্রায় ১৮ লাখ ভোটার তাঁদের দুজনের কাউকেই ভোট দেননি। এসব ভোট তাঁদের যে কারও পক্ষে পড়লে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত। দ্বিতীয় দফার ভোটে এসব ভোটার ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
প্রচারণার শুরু থেকেই বিভিন্ন জনমত জরিপে বলসোনারোর চেয়ে খানিকটা এগিয়ে ছিলেন লুলা। বিশেষত, তরুণদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে তরুণ এবং এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ভোটারদের মন জয় করা বলসোনারোর চেয়ে লুলার পক্ষে সহজ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।
এ বিষয়ে রিও ডি জেনেরিও স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোয়াও ফেরেস বলেন, ‘লুলার জয়ের সম্ভাবনা বেশি। কেননা, তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ভোটারদের মন জয় করতে পারবেন।’ তিনি জানান, প্রথম দফার ভোটে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে থাকা প্রার্থী সম্মিলিতভাবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় এসব ভোটের বেশির ভাগ লুলার পক্ষে আসতে পারে।
প্রথম দফায় মধ্যপন্থী প্রার্থী সাইমন টেবেট ৪৯ লাখ ভোট পান। বামপন্থী প্রার্থী সাইরো গোমেজ পান ৩৬ লাখ ভোট। প্রথম দফায় ভোটের লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে তাঁরা এখন লুলাকে সমর্থন দিয়েছেন। তাই তাঁদের সমর্থকদের অনেকেই দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে লুলাকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান পোডারডাটা। আর এসব ভোট বলসোনারো ও লুলার মধ্যে চূড়ান্ত ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।
ব্রাজিলে রোববারের নির্বাচনে ৩ কোটি ২৭ লাখ ভোটার ভোটদানে বিরত ছিলেন, যা দেশটির মোট ভোটারের প্রায় ২১ শতাংশ। ১৯৯৮ সালের নির্বাচনের পরও এত সংখ্যক ভোটার আর কখনোই ভোটদানে অনুপস্থিত ছিলেন না। দ্বিতীয় দফার ভোটে তাঁদের কেন্দ্রে টেনে আনা বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন দুই প্রার্থী।
পোডারডাটার পূর্বাভাস বলছে, ৩০ অক্টোবর কেন্দ্রে এলে এসব ভোটারের ৫৫ শতাংশই লুলাকে সমর্থন দিতে পারেন। বলসোনারোকে সমর্থন দিতে পারেন ৪৫ শতাংশ ভোটার। এমনটা হলেও লুলার জয়ের সম্ভাবনা বেশি।
জরিপকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাটলাসইন্টেলের প্রধান নির্বাহী আন্দেই রোমান বলেন, ‘সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা ভোটাররা যত দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, ততই লুলার জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।’ তাঁর মতে, লুলার এখন উচিত সাও পাওলোর ভোটারদের মনজয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া। এখানে তিনি বড় ব্যবধান গড়তে পারবেন।