বলিভিয়ার রাজধানী লাপাজে দেশটির প্রেসিডেন্টের বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো ঘিরে অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্টের বাসভবনের প্রধান ফটকও ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর এই তৎপরতাকে ‘অভ্যুত্থানের’ চেষ্টা আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস আর্চি।
স্থানীয় সময় বুধবার লাপাজের ঐতিহাসিক প্লাজা মুরিলো চত্বরে জড়ো হতে থাকেন সেনা সদস্যরা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ট্যাংকসহ অন্যান্য সাঁজোয়া যানও ছিল। প্লাজা মুরিলো চত্বরে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কংগ্রেস ভবন রয়েছে। অভিযানের একপর্যায়ে একটি ট্যাংক প্রেসিডেন্টের বাসভবনের ধাতব ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালায়।
অভিযানের সময় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে অবস্থান করছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল হুয়ান হোসে সুনিয়া। তাঁকে ঘিরে ছিল সেনাসদস্যসহ আটটি ট্যাংক। এ সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশে গণতন্ত্র পুনর্গঠন করতে চায়, সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। হাতে গোনা সেই একই ৪০-৫০ জনকে দেশ পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না।
সেনাবাহিনীর এই অভিযানের পরপরই হুয়ান হোসে সুনিয়াকে তাঁর পদ থেকে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট আর্চি। নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় হোসে উইলসন সানচেজকে। তিনি সেনাসদস্যদের তাঁদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়া নির্দেশ দেন। এই আহ্বান জানান প্রেসিডেন্টও। এর কিছুক্ষণ বাদেই প্লাজা মুরিলো চত্বর থেকে সেনাসদস্য ও ট্যাংকগুলোকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
সেনাবাহিনীর অভিযান চলাকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক বার্তায় প্রেসিডেন্ট আর্চি জনগণকে গণতন্ত্রের পক্ষে থেকে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসও জাতির প্রতি একই আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘একটি অভ্যুত্থান ঘটছে।’
এদিকে হুয়ান হসে সুনিয়াকে সেনাপ্রধান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে—এমন জল্পনা মঙ্গলবার থেকে চলছিল। আগের দিন সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেস যদি আবার ২০২৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।
বলিভিয়ার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা প্রথম প্রেসিডেন্ট মোরালেস। বামপন্থী এই নেতা দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। সংবিধান সংশোধন করে ২০১৯ সালে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার চেষ্টার পর তাঁর সেই জনপ্রিয়তায় ধস নামে। তিনি ওই নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন। তবে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন। দেশ ছেড়ে পালাতেও হয়েছিল তাঁকে। পরে লুইস আর্চি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেশে ফেরেন তিনি।
বুধবার বলিভিয়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানের পর এর নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা লিখেছেন, ‘আমি গণতন্ত্র ভালোবাসি, আর চাই পুরো লাতিন আমেরিকা গণতন্ত্র টিকে থাকুক। বলিভিয়ায় যে কোনো ধরনের অভ্যুত্থানের নিন্দা জানাচ্ছি আমরা।’
এক্সে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলিভিয়ার সব পক্ষকে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মান জানাতে বলেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেছেন, বলিভিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে মার্কিন প্রশাসন। একই সঙ্গে দেশটিতে সবাই শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।