ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্থানীয় সময় গতকাল বেলা তিনটায় (গ্রিনিচ মান সময় ১৮টা) শপথ নেওয়ার কথা ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বামপন্থী নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার। তিনি এমন এক সময়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন, যখন ব্রাজিল বাজেট সীমাবদ্ধতার মুখে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে। এ ছাড়া তীব্র বিভক্তির দেশটিকে এক সুতোয় গাঁথতে লুলা দা সিলভাকে নানা বাধার মুখে পড়তে হবে।
লুলার সরকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে যাওয়া জেরাল্ডো অ্যালকমিন বলেন, লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির নতুন প্রধান হিসেবে লুলার সামনে বিশাল এক চ্যালেঞ্জের পাহাড় অপেক্ষা করছে। সাড়ে ২১ কোটি জনসংখ্যার দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ খাদ্য অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে।
বলসোনারো প্রশাসনের কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে নিতে কাজ করা লুলার ট্রানজিশন দল দেশের এই পরিস্থিতির জন্য গত চার বছরের দায়িত্বহীন ব্যবস্থাপনাকে দুষছেন। তাদের অভিযোগ, কট্টর ডানপন্থী নেতা বলসোনারো দেশকে দুর্ভিক্ষের মতো বিপর্যস্ত অবস্থায় নিমজ্জিত করে ফেলেছেন। সামাজিক কল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষার মতো বিষয়ে ব্রাজিলের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাইয়ে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে লুলাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে মন্ত্রিসভা গঠন প্রায় সম্পন্ন করে এনেছেন। লুলার জন্য প্রথম বাধাটিই ছিল বামপন্থী সব নেতাকে এক টেবিলে বসানো।
গত অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচন সিনেট এবং চেম্বার অব ডেপুটি এখন আগের চেয়ে আরও বেশি ডান দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, লুলার হাত বাঁধা নেই। তিনি বামপন্থী থেকে মধ্য পন্থার বিভিন্ন নেতাকে নিয়ে জোট করতে সক্ষম হয়েছেন।
লুলা ‘ব্রাজিলকে আবার খুশি’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জিতেছেন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ লোক তাঁর বিপক্ষে গেছে। এই ভোটারদেরও সন্তুষ্ট রাখতে হবে তাঁকে।
দুর্নীতির কলঙ্ক মুক্ত হয়ে নির্বাচনে এসে ভোটারদের মন জয় করেছেন তিনি। অনেকেই ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত লুলার আগের শাসনামলের অর্থনৈতিক উন্নতির কথা মনে করে ভোট দিয়েছেন। যদিও গত অক্টোবরের নির্বাচনে বলসোনারোর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে তাঁর। লুলা পেয়েছিলেন ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট আর বলসোনোরো পান ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। নির্বাচনের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও বলসোনারোর সমর্থকেরা এখনো বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চাইছেন। লুলা যদি তাঁর ট্রানজিশন দলের কথা শোনেন, তবে তাঁর অগ্রাধিকার হবে প্রকৃতি ধ্বংস ঠেকানো। এ ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ও বর্ণবৈষম্য দূর করতেও তাঁকে কাজ করতে হবে। বলসোনোরের আমলে বেড়ে যাওয়া বন্দুকের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও সীমিত করতে হবে তাঁকে। লুলার শপথ ও দায়িত্ব গ্রহণের সময় উপস্থিত থাকবেন না বলে ইতিমধ্যে বিদায়ী ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো দেশ ছেড়েছেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিতর্কিত বলসোনারোর কারণে অনেক দেশের সঙ্গে ব্রাজিলের সম্পর্ক নড়বড়ে হয়ে গেছে। মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার কাজও করতে হবে লুলাকে। লুলার ট্রানজিশন দল মনে করছে, ব্রাজিল আগের চার বছরে তার মর্যাদা হারিয়েছে। লুলার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে ভাবমূর্তি, তা কাজে লাগিয়ে ব্রাজিল আবার তার মর্যাদা ফিরে পাবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় লুলার কাছ থেকে জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ করে আমাজন বন সুরক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ চায়। লুলা গত নভেম্বরে কপ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন।