আমাজনে উড়োজাহাজের ধ্বংসস্তূপ থেকে সবচেয়ে ছোট শিশুটিকে টেনে বের করে বড় বোন

উদ্ধারের পর চার শিশুকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে বোগোতায় নেওয়া হয়
ছবি: এএফপি

কলম্বিয়ায় আমাজন জঙ্গলে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে সবচেয়ে ছোট এক বছর বয়সী ক্রিস্তিনকে টেনে বের করেছিল বড় বোন লেসলি (১৩)। এই শিশুদের নানা গতকাল সোমবার এ কথা জানিয়েছেন।

গত ১ মে ছোট আকারের ওই উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পর ৯ জুন ক্রিস্তিন, লেসলিসহ চার ভাই-বোনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অপর দুই শিশু হলো—সোলেইনি ও তিয়েন নোরিয়েল। তাদের বয়স যথাক্রমে ৯ ও ৪ বছর।

এই শিশুদের নানা নারচিসো মিউকুতিউয়ের বক্তব্যের একটি ভিডিও কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পোস্ট করেছে। তাতে দেখা যায়, রাজধানী বোগোতার সামরিক হাসপাতালে নারচিসো মিউকুতিউ জানান, যখন সে (লেসলি) তাকিয়ে দেখে যে তার মা মারা গেছে, তখন সে মৃত তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট বোনের (ক্রিস্তিন) পা দেখতে পায় এবং তাকে টেনে বের করে।

শিশু চারটি এই সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নারচিসো মিউকুতিউ জানান, দুর্ঘটনার পর চার দিন এই চার শিশু উড়োজাহাজের ধ্বংসস্তূপের কাছেই ছিল। পরে সেখানে থেকে ওই সময় তারা উড়োজাহাজে থাকা আটা খেয়েছে। পরে শিশুরা জঙ্গল থেকে বের হওয়ার উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করে।

উদ্ধার করার সময় লেসলি খুব ক্লান্ত ছিল উল্লেখ করে নারচিসো মিউকুতিউ বলেন, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে শিশুরা বড় বড় পাতা ও গাছের ডালপালা দিয়ে ছাউনি করে থেকেছে। তাদের উদ্ধারে পাঠানো কুকুরগুলোর মধ্যে একটির সঙ্গেও কিছু সময় কাটায় তারা। উইলসন নামের সেই কুকুর এখনো নিখোঁজ। প্রাণীটিকে উদ্ধারে অভিযান চলছে।

উড়োজাহাজটি বিধ্বস্তের পর নিখোঁজ এই চার শিশুকে উদ্ধারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরসহ ১৫০ সেনাকে মোতায়েন করা হয়। যোগ দেন নিখোঁজ শিশুদের বাবাসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা।

কলম্বিয়ার শিশু কল্যাণ সংস্থা জানিয়েছে, শিশু চারটি দ্রুত সেরে উঠছে। সংস্থাটির কর্মকর্তা আদ্রিয়ানা ভেলাসকুইজ এক টুইটে বলেন, শিশুরা ভালো আছে। তাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল।

এই চার শিশু ও তাদের মা মাগদালেনা মিউকুতিউকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিধ্বস্তে পাইলটসহ প্রাপ্তবয়স্ক তিনজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাগদালেনা মিউকুতিউ রয়েছেন। তিনি হুইতোতো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেত্রী ছিলেন।

জাগুয়ার, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ নানা বন্য পশুপাখির আবাস আমাজন জঙ্গলে শিশু চারটির ৪০ দিন বেঁচে থাকাকে ‘অলৌকিক’ বলছেন কেউ কেউ। অনেকেরই মনে প্রশ্ন, এত দিন কীভাবে বেঁচে ছিল এসব শিশু?

সবচেয়ে বড় লেসলির বরাতে কর্তৃপক্ষ জানায়, টানা ৪০ দিন গভীর জঙ্গলে থাকার পরও চার শিশু বেঁচে ছিল ওদের নানির কল্যাণে। লেসলিকে তার নানি খুব ছোটবেলা থেকে গভীর জঙ্গলে মাছ ধরা ও শিকারের কলাকৌশল শিখিয়েছেন।

এমনকি প্রকৃতি থেকে খাবার সংগ্রহের উপায়ও শেখানো হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর এসব কৌশল চার শিশুকে আমাজনের গভীরে বেঁচে থাকার জন্য খাবার সংগ্রহে সহায়তা করেছে।

কলম্বিয়ার জাতীয় আদিবাসী সংগঠনের লুই আকোস্তা জানান, শিশুরা বিভিন্ন বীজ, ফল, শিকড়বাকড় খেয়েছে। তারা যেগুলোকে খাওয়া যাবে বলে মনে করেছে, সেগুলোই খেয়েছে।