ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো ২০২২ সালের নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতে একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টে এ–সংক্রান্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের ৮৮৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বলসোনারোর সমর্থকেরা ব্রাসিলিয়ায় সহিংসতা চালিয়েছিল। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা দায়িত্ব গ্রহণ করার এক সপ্তাহ পর ওই সহিংসতা হয়। ওই সময়ে বিক্ষোভকারীদের অনেকে বলেছিলেন, একটি সামরিক অভ্যুত্থানকে ন্যায্য প্রমাণের জন্য তাঁরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সামরিক অভ্যুত্থানকে অপরিহার্য বলে মনে করছিলেন তাঁরা।
ওই সহিংসতার ঘটনা নিয়ে প্রায় দুই বছরের তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সম্প্রতি পুলিশ ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টে প্রতিবেদনটি জমা দেয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস গতকাল মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।
তল্লাশি চালিয়ে, ফোনে আড়ি পেতে, আর্থিক নথিপত্র ঘেঁটে এবং আসামিদের দোষ স্বীকার করে দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ ওই প্রতিবেদনে প্রমাণগুলো উপস্থাপন করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বলসোনারো অন্তত ২০১৯ সাল থেকে অন্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় কার্যকরীভাবে পরিকল্পনা করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। নিজেকে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখার জন্য গণতান্ত্রিক আইনের শাসন বিলুপ্ত করার লক্ষ্য নিয়ে চালানো সমন্বিত কর্মকাণ্ড এগুলো।
পুলিশ আরও বলেছে, লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও তাঁর রানিংমেটকে হত্যার পরিকল্পনাটি সম্পর্কে বলসোনারো পুরোপুরি জানতেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থানচেষ্টা নিয়ে বলসোনারোর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার পক্ষে আটটি প্রমাণ আছে। যেমন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের সঙ্গে ডাকা এক বৈঠকে বলসোনারো অভ্যুত্থানের প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছিলেন। ওই কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রে যুক্ত হতেও বলেছিলেন তিনি।
পুলিশ বলছে, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী বলসোনারোর ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবে তদন্তকারী বলছেন, নৌবাহিনীর তৎকালীন কমান্ডার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) অ্যাডমিরাল আলমির গার্নিয়ার সান্তোস ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
গত সপ্তাহে অভ্যুত্থান পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বলসোনারো ও গার্নিয়ার সান্তোসসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ এনেছে পুলিশ। তাঁদের বেশির ভাগই অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।
বলসোনারো ও তাঁর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে এখন দেশটির প্রসিকিউটর জেনারেল পাওলো গোনেতই সিদ্ধান্ত নেবেন।
বলসোনারো তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত সোমবার ব্রাসিলিয়ায় সাংবাদিকদের বলসোনারো বলেন, তিনি কখনোই অভ্যুত্থানের বিষয়ে আলোচনা করেননি।
গতকাল মঙ্গলবার ওই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের ব্যাপারে বলসোনারোর আইনজীবী তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাননি।