যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় শনাক্ত হওয়া চীনা গোয়েন্দা বেলুনটি মার্কিন বাহিনী যুদ্ধবিমান দিয়ে ধ্বংস করার এক দিন আগে লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার আকাশসীমায় একটি বেলুন শনাক্ত করার দাবি করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এই বিষয়ে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেলুনটি তাদের।
কলম্বিয়ার বিমানবাহিনী গত শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গত শুক্রবার দেশটির আকাশসীমায় একটি বেলুন শনাক্ত করে। তাদের আকাশসীমায় ভেসে বেড়ানো বস্তুটি যুক্তরাষ্ট্রে বিধ্বস্ত হওয়া চীনা গোয়েন্দা বেলুনটির মতোই।
দেশটির বিমানবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আকাশসীমায় ভেসে বেড়ানো বস্তুটি ১৭ হাজার মিটার উচ্চতায় দেখা গেছে। এর গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪৬ কিলোমিটার। তবে এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি তৈরি করেনি এবং প্রতিরক্ষা বা বিমান নিরাপত্তায় কোনো ঝামেলা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য দেশ ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত করা হচ্ছে।
এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো লাতিন আমেরিকার আকাশেও সন্দেহজনক বেলুন উড়ছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। আমরা ধারণা করছি, এটি আরেকটি চীনা গোয়েন্দা বেলুন।’
তবে লাতিন আমেরিকার কোন দেশের ওপর কিংবা কবে থেকে গোয়েন্দা বেলুনটি উড়ছে, কবে সেটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে ওইদিন কিছুই জানায়নি পেন্টাগন।
এদিকে রয়টার্স জানায়, গতকাল সোমবার চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়, লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার আকাশে শনাক্ত হওয়া বেলুনটি তাদের। এটি বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ওই বেলুনের নিজে থেকে চলাচলনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সীমিত।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার পেন্টাগন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে গোয়েন্দা বেলুনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। চীনের এ বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর দিয়ে উড়ছিল।
গত শনিবার এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সন্দেহজনক চীনা গোয়েন্দা বেলুনটি ধ্বংস করা হয়। সেটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। এখন ধ্বংসাবশেষ খুঁজছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। ধ্বংসাবশেষ চীনকে ফেরত দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে দুঃখ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির দাবি, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো এ বেলুন বাতাসে ভেসে পথ ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুনটি আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে সেটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি উড়ে যাওয়ার এ ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।
এ ঘটনায় চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাঁর চীন সফর স্থগিত করেছেন। চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে গতকাল টেলিফোনে কথা বলেছেন ব্লিঙ্কেন। এ সময় ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের অনুপ্রবেশ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী কাজ।
তবে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে বেলুনটি ধ্বংস করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনায় মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে।