বলিভিয়ায় অভ্যুত্থানের চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস আর্চি। গত বুধবার অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এমন মন্তব্য করেন তিনি। লুইস আর্চির ভাষ্যমতে, সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করতে সাবেক সেনাপ্রধান হুয়ান হোসে জুনিগাকে কোনো নির্দেশ দেননি তিনি।
বুধবার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন সেনাপ্রধান জুনিগা। রাজধানী লাপাজে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন ঘেরাও করে ফেলেন তাঁর অধীন সেনাসদস্যরা। ট্যাংক দিয়ে প্রাসাদের মূল ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টাও করা হয়। এ সময় ভবনটির ভেতর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়।
ওই ঘটনার কিছুক্ষণ পর সেনাপ্রধান জুনিগাকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নিয়োগ করা হয় নতুন সেনাপ্রধান। এরপর প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের আশপাশ থেকে সরে যেতে শুরু করেন সেনাসদস্যরা। গত মঙ্গলবার জানানো হয়, অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধানসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের বিষয়ে সাবেক সেনাপ্রধান জুনিগা বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট আর্চির নির্দেশেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতেই এমনটি করেছেন আর্চি। তবে বুধবার রাতে জুনিগার এমন দাবি অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কেউ কি কখনো নিজের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের নির্দেশ দেয়?’
জুনিগার দাবি ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মারিয়া নেলা পেদ্রাও। আর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা সংকটের এই দিনে লুইস আর্চির পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ইতালির একটি রেডিওকে তিনি বলেন, আর্চিকে আরও শক্তিশালী করতে তিনি বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ দে লা সিয়েরা শহরে যাবেন।
এ ছাড়া বলিভিয়ায় এ অভ্যুত্থানচেষ্টার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো। আর বলিভিয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
বলিভিয়ার ইতিহাসে এর আগেও বেশ কয়েকবার অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটি চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। সংকটের কারণ, দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়া। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বলিভিয়ায় বেশির ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আসত প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে জ্বালানি তেল আমদানি কমাতে বাধ্য হয়েছে দেশটির সরকার।
নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গুস্তাভো ফ্লোরেস-ম্যাকিয়াসের ভাষ্যমতে, অর্থনৈতিক কারণে বলিভিয়ার মানুষের ভেতরে যে অসন্তোষ রয়েছে, তা এই ব্যর্থ অভ্যুত্থান থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।