আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার মিলেই
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার মিলেই

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে পূর্বসূরিদের ঠিক উল্টো কথা বলছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার মিলেই বলেছেন, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ বর্তমানে ‘যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রণে’—এ বিষয়টি তিনি মেনে নিচ্ছেন।

বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কট্টর ডানপন্থী এই রাজনীতিবিদ এই দ্বীপপুঞ্জকে তাঁর দেশের সঙ্গে একীভূত করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে তিনি সমাধান চান কূটনৈতিক উপায়ে। অবশ্য তিনি এ–ও বলেছেন, এই সমস্যার ‘আশু সমাধান’ নেই।

ফকল্যান্ড নিয়ে আর্জেন্টিনার সাবেক নেতাদের তুলনায় হাভিয়ার মিলেইয়ের সুর ভিন্ন। ঐতিহাসিকভাবে আর্জেন্টিনার নেতারা এই দ্বীপপুঞ্জকে তাঁদের দেশের অংশ বলে দাবি করে থাকেন।

প্রেসিডেন্ট মিলেই স্বীকার করেন, যুক্তরাজ্য থেকে ফকল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব উদ্ধার করতে কয়েক দশকও লেগে যেতে পারে। তিনি বলেন, আর্জেন্টিনা কোনো ‘সংঘাত চায় না’।

গত এপ্রিলের শুরুতে ফকল্যান্ড যুদ্ধের ৪২তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই দ্বীপকে আর্জেন্টিনার নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি ‘পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেন মিলেই।

যেসব নেতা শুধু ফকল্যান্ড নিজেদের দাবি করে দায়িত্ব শেষ করেছেন, মিলেই তাঁদের সমালোচনা করেন। বলেন, তাঁরা কেবল কথা বলেছে, কিন্তু কোনো ফল আনতে পারেনি।

যুক্তরাজ্যের সীমানার বহু বাইরের এই অঞ্চল নিয়ে ১৯৮২ সালে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধে। ওই যুদ্ধ যুক্তরাজ্যের ২৫৫ সেনা, দ্বীপের ৩ নাগরিক ও আর্জেন্টিার ৬৪৯ সেনা নিহত হয়েছিলেন।

তবে ওই সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকা মার্গারেট থ্যাচারের প্রশংসা করেছেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট। বিবিসির সঙ্গে তিনি যেখানে কথা বলছিলেন, সেই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মার্গারেট থ্যাচারের ছবিসহ বেশ কিছু স্মারক দেখা যায়।

যুদ্ধের সময় লেডি থ্যাচার আর্জেন্টিনার নৌবাহিনীর একটি জাহাজকে অকেজো করে দিতে জেনারেল ব্রেলগ্রানোকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই অভিযান চালাতে গিয়ে জাহাজের ৩২৩ আরোহী নিহত হন।

এরপরও থ্যাচারের প্রশংসা করেন কি না—এমন এক প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট মিলেই বলেন, ‘জাতীয়তা বা জাতি–বর্ণের কারণে কারও সমালোচনা করা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে খুবই বিপজ্জনক। আমি মার্গারেট থ্যাচারের অনেক বক্তৃতা শুনেছি। তিনি এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সুতরাং তাঁর প্রশংসা করতে সমস্যা কোথায়?’

আর্জেন্টিনার উপকূল থেকে ৩০০ মাইল এবং যুক্তরাজ্য থেকে আট হাজার মাইল দূরে আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ–পশ্চিমে অবস্থিত ফকল্যান্ডকে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের দাবি করে আসছে আর্জেন্টিনা।

বুয়েনস এইরেসে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আঙিনায় ওই দ্বীপপুঞ্জের একটি ফলক স্থাপন করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন গত ফেব্রুয়ারিতে ওই দ্বীপ পরিদর্শনে গেছেন। তিনি সেখানে বলেছিলেন, এই দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব নিয়ে আলোচনার কিছু নেই।

প্রেসিডেন্ট মিলেই বলেন, ‘এই অঞ্চল যদি এখন যুক্তরাজ্যের হাতে থাকে, তারা এমন কথা বলতেই পারে। এর মধ্যে আমি উসকানির কিছু দেখি না।’

মিলেইর এই বক্তব্য অন্য রকম গুরুত্ব বহন করে। কারণ, অতীতে আর্জেন্টিনার নেতারাসহ অনেকে এই দ্বীপপুঞ্জ যুক্তরাজ্যের—এমনটা কখনো মেনে নেননি।

২০১৩ সালে লর্ড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এই দ্বীপের বাসিন্দারা যুক্তরাজ্যের টেরিটরি হিসেবে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট মিলেই বলেন, তিনি এই দ্বীপপুঞ্জকে আর্জেন্টিনার অংশ হিসেবে দেখতে চান। তবে সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে।