স্ত্রীর সঙ্গে জোভেনেল মইসি
স্ত্রীর সঙ্গে জোভেনেল মইসি

আসলেই কি স্ত্রীর ক্ষমতার লোভে প্রাণ দিতে হয়েছিল হাইতির প্রেসিডেন্টকে

নিজ বাড়িতে সুরক্ষিত অবস্থায় ২০২১ সালের ৭ জুলাই খুন হয়েছিলেন হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসি। যে খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত চারজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। আরও বেশ কয়েকজনের বিচার চলছে। কিন্তু আজও জানা যায়নি কে ছিলেন ষড়যন্ত্রের মূলে। আমাদের বিশেষ আয়োজনে আজ থাকছে জোভেনেল মইসি হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত।

ঠিক তিন বছর আগে, ২০২১ সালের ৭ জুলাই ভোররাতে রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সে ব্যক্তিগত বাসভবনে ভাড়াটে খুনিদের গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসির দেহ।

হামলায় জোভেনেলের স্ত্রী মার্টিন মইসি গুরুতর আহত হন। হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমবার স্বামীর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছিলেন মার্টিন মইসি।

নিজের টুইটার (বর্তমান এক্স) অ্যাকাউন্টে এক ‘ভয়েজ মেসেজ’ পোস্ট করেছিলেন মার্টিন। সেখানে বলেছিলেন, মধ্যরাতে চোখের পলকে খুনিরা তাঁদের বাড়িতে ঢোকে। তারা গুলি করে তাঁর স্বামীকে ঝাঁজরা করে দেয়। এ হামলা এত দ্রুত ঘটেছিল, তাঁর স্বামী জোভেনেল মইসি একটা কথা পর্যন্ত বলার সুযোগ পাননি।

রাজনৈতিক কারণে তাঁর স্বামীকে নিশানা করা হয়েছিল বলে সে সময় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মার্টিন। বিশেষ করে তাঁর স্বামীর সংবিধান পরিবর্তনে গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনার কারণে।

জোভেনেল মইসির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে স্ত্রী মার্টিন মইসি। ২৩ জুলাই, ২০২১

‘ভয়েজ মেসেজে’ মার্টিন আরও বলেছিলেন, অজ্ঞাত খুনিরা হত্যাকাণ্ডের সময় বলেছিল, তারা প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসির স্বপ্ন শেষ করে দিতে চায়।

কিন্তু জোভেনেল হত্যাকাণ্ডের প্রায় বছর তিনেক পর জানা যায়, স্ত্রী মার্টিনের ‘ক্ষমতালিপ্সা আর স্বামীকে সরিয়ে নিজে প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার বলি’ হতে হয়েছিল জোভেনেল মইসিকে।

যেভাবে খুন হন জোভেনেল মইসি

খুন হওয়ার সময় জোভেনেলের বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। ২০২১ সাল, মধ্যরাত, ঘড়ির কাঁটায় ৬ জুলাই শেষ হয়ে সবে ৭ জুলাই শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের পেলেরিন ফাইভে জোভেনেলের ব্যক্তিগত বাসভবনে ঢুকে তাঁকে গুলি করে।

জোভেনেলের শরীরে মোট ১২টি গুলি লেগেছিল। তাঁর কপালে, বুকে ও পেটে বেশ কয়েকটি গুলি বিদ্ধ হয়। তাঁর বাঁ চোখ কোটর থেকে বের হয়ে এসেছিল। গুলির আঘাতে তাঁর হাত ও গোড়ালির হাড় ভেঙে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত চালানো একজন বিচারক।

জোভেনেল ঘটনাস্থলেই মারা যান। মেঝেতে চিৎ হয়ে শোয়া অবস্থায় তাঁর রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। শুরুতে মৃত ভাবা হলেও পরে তাঁর স্ত্রী মার্টিন মইসিকে সেখানে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি গুরুতর আহত ছিলেন।

হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসি হত্যায় জড়িত সন্দেহে এই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়

যারা খুন করতে এসেছিল

ভাড়াটে বিদেশি খুনিদের একটি দল মূলত জোভেনেলকে হত্যায় অংশ নিয়েছিল। হাইতি পুলিশ সে সময় বলেছিল, খুনিদের দলে ২৬ জন কলম্বিয়ান ও দুজন হাইতি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ছিলেন।

যে দুই মার্কিন জোভেনেলকে খুনে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, দোভাষী হিসেবে কাজ করতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাঁদের ভাড়া করা হয়েছিল।

ওই দুজন আরও দাবি করেছিলেন, তাঁরা প্রেসিডেন্ট জোভেনেলকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। বরং তাঁরা ভেবেছিলেন, প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা চলছে এবং গ্রেপ্তারের সময় দোভাষী হিসেবে তাঁদের কাজে লাগানো হবে।

হাইতির রাষ্ট্রীয় ভাষা ক্রেওল ও ফরাসি। অন্যদিকে কলম্বিয়ার সন্দেহভাজন খুনিরা স্প্যানিশ ভাষাভাষী।

জোভেনেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কলম্বিয়ার যে কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের বেশির ভাগই সাবেক সেনাসদস্য। তাঁদের মধ্যে একজন লে. কর্নেল পদমর্যাদারও ছিলেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কলম্বিয়ার সাংবাদিকদের সে সময় বলেছিলেন, হাইতিতে ‘নিরাপত্তার কাজ করতে’ তাঁদের ভাড়া করা হয়েছে। এমন কথা বলে তাঁরা পরিবার থেকে বিদায় নিয়েছিলেন।

কলম্বিয়ায় সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর অনেকে বিদেশে নানা সিকিউরিটি ফার্মের হয়ে কাজ করতে যান। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। নিজেদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা নানা সশস্ত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

মইসির বাড়িতে যেভাবে ঢুকেছিল খুনিরা

তিন মাস হাইতিতে অবস্থান করে প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসিকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। জোভেনেল খুন হওয়ার পর তাঁর বাড়িতে আততায়ীদের প্রবেশের একটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ ওই ভিডিও ধারণ করেছেন বলে ধারণা করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কালো রঙের পোশাক পরা অস্ত্রধারীরা কয়েকটি গাড়িতে করে প্রেসিডেন্ট জোভেনেলের বাড়ির সামনে আসেন।

খুব সম্ভবত একজন নিরাপত্তারক্ষীকে জোর করে সড়কে মুখ ঠেসে শুয়ে পড়তে বাধ্য করে খুনিরা। সে সময় একজনকে লাউডস্পিকারে ইংরেজিতে বলতে শোনা যায়, ‘ডিইএ (ইউএস ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অভিযান, সবাই মাটিতে শুয়ে পড়ুন।’

এ বিষয়ে এক ব্যাখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সে সময়ের হাইতির রাষ্ট্রদূত বোচিত এডমন্ড বলেছিলেন, হামলাকারীরা মার্কিন ড্রাগ এজেন্টদের ছদ্মবেশ নিয়েছিল।

বোচিত বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, সে সময় তাঁরা সত্যিই মার্কিন ড্রাগ এজেন্ট কি না, তা নিয়ে সন্দেহ হওয়ার হয়তো কোনো অবকাশ ছিল না।’

কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তাঁরা জোভেনেলের বাসভবনের প্রধান ফটক থেকে মূল বাসভবনের মাঝের ফাঁকা জায়গায় কিছু গুলির খোসা খুঁজে পেয়েছেন। এর অর্থ সেখানে একাধিক গুলি চলেছিল।

যদিও সে রাতে মাত্র দুজন গুলিবিদ্ধ হন। একজন জোভেনেল নিজে এবং অন্যজন তাঁর স্ত্রী মার্টিন, যা প্রেসিডেন্টের রক্ষীদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

নিরাপত্তারক্ষীরা খুব সম্ভবত হামলাকারীদের বাধা দেওয়ার সামান্য চেষ্টা করেছিলেন অথবা কোনো চেষ্টাই করেননি। ভবনের ভেতর শুধু দুজন গৃহকর্মীকে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

জোভেনেল খুনের বিচার কত দূর

হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে হাইতি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক জেমস সোলাগেস ও জোসেফ ভিনসেন্টও ছিলেন।

২০২৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সোলাগেস ও ভিনসেন্টের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগ জোভেলেন মইসি খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার মামলা করে তাঁদের বিচার শুরু করে।

আরেক হাইতি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসক ক্রিস্টিয়ান এমানুয়েল সানোনের বিরুদ্ধে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। হাইতির একজন সাবেক সিনেটরসহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে জোভেনেল খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।

জোভেনেলকে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামির একটি আদালতে আলাদা মামলা হয়েছে এবং সেটির বিচারকাজ চলছে। মইসি হত্যা পরিকল্পনার কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ফ্লোরিডায় বসে হয়েছিল। হাইতির প্রেসিডেন্টকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সেখানে ১১ জনের বিচার চলছে।

এই ১১ আসামির মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তাঁরা জোভেনেলকে অপহরণের জন্য কলম্বিয়ার ভাড়াটে খুনিদের ঠিক করেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে যে ১১ জনের বিচার চলছে, তাঁদের একজন হাইতির সাবেক সিনেটর জন জোয়েল জোসেফ। হাইতিতে রাজনীতিক হিসেবে সুপরিচিত জোসেফ বিচার এড়াতে জ্যামাইকা পালিয়ে গিয়েছিলেন। গত বছরের জুনে জ্যামাইকা থেকে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।

গত ডিসেম্বরে মিয়ামির আদালত জোসেফকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। এই মামলায় আরও দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন হাইতির বংশোদ্ভূত চিলির ব্যবসায়ী রোডলফে জার ও কলম্বিয়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জার্মান আলেহান্দ্রো রিভেরা গার্সিয়া।

আর এই মামলায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জোসেফ ভিনসেন্টকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভিনসেন্ট যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা যায়।

খুনের ঘটনায় সবচেয়ে বড় চমক মার্টিন মইসি:

প্রেসিডেন্ট জোভেনেল হত্যাকাণ্ডে সবচেয়ে বড় চমক হয়ে এসেছে এ খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মার্টিন মইসির জড়িত থাকার অভিযোগ। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে হাইতির একজন বিচারক হত্যাকাণ্ডের মামলায় মার্টিন মইসি, হাইতির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্লদ জোসেফ ও সাবেক এক পুলিশের প্রধানসহ ৫১ জনকে অভিযুক্ত করেছেন।

জোভেনেলকে হত্যার সময় হাইতির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ক্লদ জোসেফ।

জোভেনেল হত্যার ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে থাকা বিচারক ওয়ালথার ওয়েসার ভলতেয়ার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচারক ভলতেয়ার ওই নির্দেশ দেওয়ার আগেই আদালতের এ-সংক্রান্ত ১২২ পৃষ্ঠার একটি নথি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। সেখানে বলা হয়, মার্টিন মইসি হাইতির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্লদ জোসেফের সঙ্গে মিলে স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। স্বামীকে খুন করে তিনি নিজেই প্রেসিডেন্ট হতে চেয়েছিলেন। ফাঁস হওয়া ওই নথিতে হত্যার পরিকল্পনার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে জোভেনেলকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কারা, তাঁদের কারা অর্থায়ন করছে, সে ব্যাপার ফাঁস হওয়া ওই নথিতে সুস্পষ্ট কিছু উল্লেখ করা নেই।

মার্টিন মইসিকে অভিযুক্ত করার কারণ হিসেবে নথিতে বলা হয়েছে, ‘হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর জবানবন্দি এতটাই অসংগতিপূর্ণ ছিল যে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে হাইতিতে ফিরে আসেন মার্টিন মইসি। হাইতির বিমানবন্দরে তাঁকে দেখা যাচ্ছে

মার্টিন মইসির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

ফাঁস হওয়া নথিতে মার্টিন মইসির বিরুদ্ধে যেসব প্রমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো লিওনেল ভালব্রানের বক্তব্য। প্রেসিডেন্ট জোভেনেল যখন খুন হন, তখন হাইতির প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ন্যাশনাল প্যালেসের মহাপরিচালক ছিলেন ভালব্রান।

ভালব্রানের অভিযোগ, জোভেনেল খুন হওয়ার দুই দিন আগে ফার্স্ট লেডি মার্টিন ন্যাশনাল প্যালেসে এসেছিলেন। সেখানে তিনি পাঁচ ঘণ্টা সময় কাটান এবং প্যালেস থেকে ‘বেশ কিছু জিনিস’ সরিয়ে ফেলেন। তবে তিনি ঠিক কী কী জিনিস সরিয়েছিলেন, তা পরিষ্কার জানা যায়নি।

ভালব্রান আরও বলেন, ওই দিন ফার্স্ট লেডি মার্টিন তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘জোভেনেল মইসি আমাদের জন্য কিছুই করেননি’।

গত ফেব্রুয়ারিতে ফাঁস হওয়া নথিতে মার্টিনের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে আরও একজনের বক্তব্যের উল্লেখ রয়েছে। তিনি হলেন হাইতির বিচার মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা জোসেফ ফেলিক্স বাদিও। বাদিওর বিরুদ্ধেও অবশ্য জোভেনেলকে খুনের চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। নথিতে বাদিও অভিযোগ করেন, মার্টিন মইসি তাঁর স্বামীকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।

বাদিও বলেছেন, ‘ফার্স্ট লেডি ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী ক্লদ জোসেফের সঙ্গে মিলে প্রেসিডেন্ট জোভেনেলকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল, তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর ক্লদ জোসেফ পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবেন। পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্টিন প্রার্থী হবেন।’

মার্টিন মইসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি অন্যায্য বলেছেন।

আর অভিযুক্ত হওয়ার আগে মিয়ামি হেরাল্ড পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্লদ জোসেফ অভিযোগ করে বলেছিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি (গত ২৪ এপ্রিল পদত্যাগ করেছেন) বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে বিচারব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি ও সাবেক ফার্স্ট লেডি প্রধানমন্ত্রী হেনরির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত হয়েছেন।

ক্লদ জোসেফ আরও বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট জোভেনেল খুন হওয়ায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছিলেন এরিয়েল হেনরি। খুন হওয়ার মাত্র দুই দিন আগে জোভেনেল নিজে হেনরিকে হাইতির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

জোভেনেল হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পর হেনরি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের কথা থাকলেও তা না করায় তাঁর বিরুদ্ধেও জনবিক্ষোভ শুরু হয় এবং চাপের মুখে তিনি গত ২৪ এপ্রিল পদত্যাগ করেন।

জোভেনেল খুনে অন্য যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শোনা যায়

ফোন রেকর্ড অনুযায়ী জোভেনেল খুন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এরিয়েল হেনরির কাছে একজন ক্রমাগত ফোন করে গেছেন। তিনি আর কেউ নন বরং মার্টিনের বিরুদ্ধে সরাসরি স্বামীকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা জোসেফ ফেলিক্স বাদিও।

হেনরি বারবার বলেছেন, তিনি সেই রাতে বাদিওর কাছ থেকে ফোন পেলেও তাঁকে আর পাল্টা ফোন করেননি।

জোভেনেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, এমন গুঞ্জনকে তিনি ‘মিথ্যা খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

২০১৯ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে জিতে হাইতির ৪৩তম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জোভেনেল। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি তাঁর পদত্যাগের দাবিতে হাইতিতে গণ-আন্দোলনও হয়েছিল।

জোভেনেল খুনের মধ্য দিয়ে হাইতির রাজনীতিতে যে চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল, এখনো তা অব্যাহত আছে। তাঁর খুনের তিন বছর পেরিয়ে এখনো তাঁর উত্তরসূরি বেছে নিতে নির্বাচনের আয়োজন করা যায়নি। বরং ক্যারিবীয় অঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত দেশটি দিন দিন আরও অশান্ত হয়ে পড়ছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, অবজারভার