ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াল, গঞ্জালেস লড়বেন নোবোয়ার সঙ্গে  

ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন একজন নারী ভোটার। ২০ আগস্ট, দেশটির কুইটো শহরে
ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। তাই নিয়ম মেনে দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে ভোট গ্রহণ।

গতকাল রোববারের ভোটে এগিয়ে থাকা দুই প্রার্থী লুইসা ম্যাগদালেনা গঞ্জালেস ও ড্যানিয়েল নোবোয়া পরবর্তী দফার ভোটে লড়বেন।

ইকুয়েডরের এবারের নির্বাচন বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে। কেননা, ৯ আগস্ট সন্ধ্যায় দেশটির কুইটো শহরে প্রচার করার সময় এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জনপ্রিয় প্রার্থী ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ড নির্বাচনকে মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে আসে।

লুইসা ম্যাগদালেনা গঞ্জালেস

ভোট গ্রহণের বিষয়ে ন্যাশনাল ইলেকটোরাল কাউন্সিল অব ইকুয়েডর (সিএনই) জানায়, গতকালের প্রথম দফার ভোটে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন লুইসা ম্যাগদালেনা গঞ্জালেস। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ড্যানিয়েল নোবোয়া। তবে কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ সমর্থন পাননি। তাই নিয়ম মেনে আগামী ১৫ অক্টোবরে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে।  

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৮ শতাংশ ভোট গণনা শেষে লুইসা ম্যাগদালেনা গঞ্জালেস পেয়েছেন ৩৩ শতাংশ। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ড্যানিয়েল নোবোয়া ২৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন। ইকুয়েডরের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ সমর্থন পাওয়া দুই প্রার্থী পরবর্তী দফার নির্বাচনে লড়বেন।

এ বিষয়ে সিএনইর প্রেসিডেন্ট ডায়ানা আতামাইন্ত গতকাল বলেন, প্রাথমিক ফলাফল এটাই স্পষ্ট করেছে যে, আগামী ১৫ অক্টোবর আমাদের আরেক দফা নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে।

লুইসা গঞ্জালেস ইকুয়েডরের সাবেক বামপন্থী প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেরার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

কোরেরা সরকারের পর্যটন ও শ্রমমন্ত্রী ছিলেন লুইসা। ২০২০ সালে দেশটির একটি আদালত দুর্নীতির অভিযোগে কোরেরাকে আট বছরের সাজা দিয়েছিলেন। তাঁর আগে থেকে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে রয়েছেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিদেশে অবস্থান করে এবারের নির্বাচনে লুইসা গঞ্জালেসকে সমর্থন দিয়েছেন তিনি। সাজাপ্রাপ্ত ও বিদেশে অবস্থান করলেও ইকুয়েডরের রাজনীতিতে এখনো কোরেরার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারে লুইসা গঞ্জালেস সাধারণ মানুষের কল্যাণে সরকারের বরাদ্দ ও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের পরিধি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দারিদ্র ও বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা সংকটের মূলে গিয়ে তা প্রতিরোধ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। লুইসা গঞ্জালেস ইকুয়েডরের বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার আনার পক্ষে। এসব প্রতিশ্রুতি ভোটারদের অনেককেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছেন।

অন্যদিকে ৩৫ বছর বয়সী ড্যানিয়েল নোবোয়া পেশায় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও সাবেক আইনপ্রনেতা।

ইকুয়েডরের প্রতিষ্ঠিত কলা ব্যবসায়ী ইভারো নোবোয়ার সন্তান তিনি। পাঁচবার ড্যানিয়েল নোবোয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়ছেন। তাঁর মধ্যপন্থী অ্যাসিওন ডেমোক্র্যাটিকা ন্যাসিওনাল পার্টি তরুণদের জন্য আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং কর ফাঁকি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থার নেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ড্যানিয়েল নোবোয়া

একসময় শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত ইকুয়েডরে মাদক পাচার ও সংঘবদ্ধ অপরাধ-সংক্রান্ত সহিংসতা বাড়ছে। দেশটির আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি যে অবনতিশীল, তার সবশেষ প্রমাণ ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিও নিহত হওয়ার ঘটনা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব মুভিমিয়েন্তো কনস্ট্রুয়ে দলের নেতা ফার্নান্দো হত্যাকাণ্ডের পর ইকুয়েডরে এখন সংঘবদ্ধ অপরাধের লাগাম টানা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে আরেকটি চ্যালেঞ্জের বিষয় সামনে এসেছে। তা হলো— সাইবার নিরাপত্তা। কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকালের নির্বাচনে টেলিমেটিক ভোটিং প্ল্যাটফর্মে রাশিয়া, ইউক্রেন, চীন ও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ থেকে সাইবার আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে। সিএনই জানিয়েছে, এ হামলা ভোটদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সীমিত হয়ে আসায় ইকুয়েডরের অনেক মানুষ দেশ ছেড়েছেন, ছাড়ছেন। তবে আগামী অক্টোবরে যিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসুক না কেন, তিনি দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। কেননা, নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকবেন ২০২৫ সাল পর্যন্ত। পরে আবারও ভোটের লড়াইয়ে নামতে হবে তাঁকে। তাই এত অল্প সময়ে এসব সমস্যা সমাধান করা বেশ কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই।