লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার তেল, গ্যাস ও সোনা খাতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ভেনেজুয়েলার সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় একটি নতুন সাধারণ লাইসেন্সের মাধ্যমে ওপেকভুক্ত দেশ ভেনেজুয়েলাকে আগামী ছয় মাস নিজেদের পছন্দের বাজারে তেল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। তেল, গ্যাস ও সোনা খাতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন ও গণতন্ত্রের অবক্ষয়কে কেন্দ্র করে ভেনেজুয়েলার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো অটুট থাকবে।
ভেনেজুয়েলায় আগামী ২০২৪ সালের দ্বিতীয় অর্ধভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াশিংটন সতর্ক করে বলেছে, ভেনেজুয়েলার দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া নির্বাচনী সমঝোতা যদি ভেস্তে যায়, তবে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ওয়াশিংটন নভেম্বরের শেষ নাগাদ সব প্রার্থীকে পুনর্বহালের জন্য ভেনেজুয়েলাকে সময় বেঁধে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চান, তাঁদের সবাইকে সুযোগ দিতে হবে।’
পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে ‘বিনা কারণে আটক’ মার্কিন নাগরিক এবং ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার কথাও বলেছেন ব্লিঙ্কেন।
গত মঙ্গলবার বার্বাডোসে ভেনেজুয়েলার সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১২ দফার এ চুক্তিতে বলা হয়েছে, সব প্রার্থীকে সরকারি ও বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে। সারা দেশে প্রার্থীদের অবাধ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে চুক্তিতে। দুই পক্ষ দেশের ভেতরে ও বাইরে ভোটার নিবন্ধনের তালিকা হালনাগাদের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। ভেনেজুয়েলার লাখ লাখ প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে বিরোধী দলের প্রার্থী মারিনা কোরিনা মাচাদোকে বহিষ্কারের ব্যাপারে দুটি বিরোধী দল ও সরকার একমত হতে পারেনি।
ভেনেজুয়েলার ২০১৮ সালের নির্বাচনকে ‘অবৈধ’ দাবি করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
ভেনেজুয়েলার এ সংকটকে সহজ করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বার্থ জড়িত। ২০১৮ সালে তেল নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে ৭০ লাখের বেশি মানুষ অভিবাসী হন। বেশির ভাগ অভিবাসীই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুতকারী দেশ। ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ায় দুটি দেশই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।