ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা বিরোধীদলীয় প্রার্থী এডমান্ডো গঞ্জালেজ উরুতিয়াকে আজ সোমবার আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। একটি অপরাধ তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁকে তলব করা হয়েছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত কর্মকর্তারা তদন্তটি শুরু করেছেন।
তবে ৭৪ বছর বয়সী গঞ্জালেজ উরুতিয়া আসলেই আদালতে হাজির হবেন কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, মাদুরো ইতিমধ্যে তাঁকে এবং বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিয়া মাচাদোকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। এমন হুমকির কারণে এর আগেও আদালতের একটি শুনানিতে উরুতিয়া হাজির হননি।
শনিবার কৌঁসুলিরা ঘোষণা দেন যে ২৬ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় এডমান্ডো গঞ্জালেজ উরুতিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। বিরোধী দল ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যে ফল প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে তদন্ত করছে তারা। বিরোধীদের দাবি, মাদুরো যে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, এ ফলই তার প্রমাণ।
গত ২৮ জুলাই ভেনেজুয়েলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তাঁরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ মাদুরোকে নির্বাচনে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়নি। ২৮ জুলাইয়ের নির্বাচনের পুঙ্খানুপুঙ্খ ফল প্রকাশ করা ছাড়া তারা মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করতে রাজি নয়।
৫২ শতাংশ ভোট গণনা শেষে ভেনেজুয়েলার জাতীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষ (সিএনই) মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করে। তবে তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ ফল প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের দাবি, হ্যাকাররা তথ্য নষ্ট করেছে।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী পক্ষ ভোটের ফলাফল-সংক্রান্ত যেসব নথি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, গঞ্জালেজ উরুতিয়া ৬৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
গতকাল রোববার রাতে গঞ্জালেজ উরুতিয়া বলেছেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের নিশ্চয়তা না দিয়েই তাঁকে তলব করা হয়েছে।
বিরোধীদলীয় এ প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের অ্যাটর্নি জেনারেল বারবারই রাজনৈতিক অভিযোগকারীর মতো আচরণ করেছেন। তিনি আগাম নিন্দা জানিয়েছেন এবং এখন স্বাধীনতা ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের নিশ্চয়তা ছাড়াই একটি সমন জারি করেছেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল তারেক উইলিয়াম সাব শুক্রবার বলেছেন, বিরোধীদের ওয়েবসাইটটি নির্বাচন কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাকে ‘করায়ত্ত’ করেছে। ওই ওয়েবসাইটেই নির্বাচনের ফল প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা।
মাদুরোর ঘনিষ্ঠ সাব বলেন, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ঘোষিত ফল না মানার কারণ গঞ্জালেজ উরুতিয়াকে ব্যাখ্যা করতে হবে।
গত ৩০ জুলাই মাচাদোর সঙ্গে একটি বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ার পর থেকে গঞ্জালেজ উরুতিয়াকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। মাচাদো নিজেও অনেকটা গা ঢাকা দিয়েই রয়েছেন। তবে সম্প্রতি একটি বিক্ষোভে তাঁকে অংশ নিতে দেখা গেছে।
ক্ষমতা হস্তান্তরসংক্রান্ত কোনো আলোচনায় অংশ নেওয়ার দাবি খারিজ করে দিয়েছেন মাদুরো।
গত শনিবার ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাচাদো অভিযোগ করেন, মাদুরো একটি নৃশংস সন্ত্রাসী অভিযান শুরু করেছেন।
ভেনেজুয়েলায় মাদুরোকে জয়ী ঘোষণা করার পর বিক্ষোভ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে সামরিক বাহিনীর দুই সদস্যসহ ২৭ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন প্রায় ২০০ মানুষ। ২ হাজার ৪০০-এর বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে।