শত শত নিখোঁজের বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ

নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য উদ্বিগ্ন স্বজনের কান্না। ছবি: রয়টার্স
নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য উদ্বিগ্ন স্বজনের কান্না। ছবি: রয়টার্স

ব্রাজিলে লোহার আকরিক আহরণের খনিতে বাঁধধসের ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে সেখানে ভিড় করছেন স্বজনেরা। এখন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৩৪ হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে প্রায় ৩০০। গত শুক্রবার ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বে মিনাস জেরাইস অঙ্গরাজ্যে ব্রুমাদিনহো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, ব্রুমাদিনহোর আশপাশ নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে চষে ফেলছে উদ্ধারকারী দল। ভ্যালে নামক একটি খনিপ্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বাঁধটি ধসের কারণ এখনো জানা যায়নি। বাঁধ ভেঙে স্রোতের মতো আসা কাদাজলে খনি এলাকার ক্যাফেটেরিয়া পুরো চাপা পড়ে যায়। ওই সময় সেখানে খনির শ্রমিকেরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। বাঁধ এলাকার ভেতর, আশপাশের খামার ও বাড়িঘরে বিভিন্ন খনির শ্রমিকেরা বসবাস করতেন। তাঁদের বাড়িঘর ও যানবাহন ধ্বংস হয়ে গেছে।

খনির বাঁধ ভেঙে নির্গত বিপুল পরিমাণ বর্জ্যের নিচে চাপা পড়েছেন শত শত মানুষ। ছবি: রয়টার্স

গতকাল উদ্ধারকারী দল মাটি সরানোর যন্ত্রপাতি ও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধারকাজ চালায়। সেখানে সড়কে যোগাযোগব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়েছে। চাপা পড়া অবস্থায় ৫০ জনের মতো ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে যত সময় গড়াচ্ছে, ততই জীবিত উদ্ধারের আশা কমে যাচ্ছে।

মিনাইস জেরাইসের গভর্নর রমেউ জেমা বলেছেন, চাপা পড়া ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারের আশা কমে যাচ্ছে। হয়তো এখন মৃতদেহ উদ্ধার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ মর্মান্তিক পরিণতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়া উচিত।

খনির বাঁধ ভেঙে নির্গত বর্জ্যে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। ছবি: রয়টার্স

নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন স্বজনেরা। কোনো তথ্য না পেয়ে তাঁরা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। অলিভিয়া রাইয়োস নামের একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার পাঁচ বছরের ভাগনে জানতে চাইছে, তার বাবা কি মারা গেছে? আমি তাকে কী জবাব দেব?’ হেলটন পেরেইরা নামের একজন তাঁর স্ত্রী ও বোনের সন্ধানে দুর্ঘটনাস্থলে ছোটাছুটি করছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও বোন ওই খনিতে কাজ করতেন। তিনি বলেন, ‘আমি খুব চিন্তিত। আমি খবর চাই।’

গতকাল হেলিকপ্টারে করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো। বিপর্যয়ের মাত্রা দেখে তিনি টুইটে বলেন, এ অবস্থা দেখে আবেগপ্রবণ না হওয়াই কঠিন।

এদিকে গতকাল ব্রাজিলের পরিবেশবিষয়ক সুরক্ষা সংস্থা (ইবামা) দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে ভ্যালেকে সাড়ে ৬৬ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে। বলা হচ্ছে, দুর্ঘটনার সময় খনির বাঁধের অ্যালার্মও কাজ করেনি। সেখানের কর্মীরা সাইরেন বাজা মাত্র সাড়া দিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। অ্যালার্ম না বাজায় তাঁরা সে সুযোগও পাননি।

কাদাজলে চাপা পড়েছে বাড়িঘর। ছবি: রয়টার্স

তবে ভ্যালের প্রেসিডেন্ট ফাবিও শোয়ার্জম্যান দাবি করেন, দুর্ঘটনাটি এত আকস্মিক ছিল যে নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও জানান, বাঁধের অবস্থা পর্যবেক্ষণে একটি জার্মান প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে তাদের দেওয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাঁধের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।

তিন বছর আগে মিনাস জেরাইসের আরেক শহরে একইভাবে বাঁধধসের ঘটনা ঘটেছিল। ওই সময় ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটে।

ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় খনিপ্রতিষ্ঠান ভ্যালের মালিকানাধীন এই বাঁধ এবার কেন ধসে পড়ল, এর সুস্পষ্ট কারণ জানা যায়নি। বাঁধটি ১৯৭৬ সালে তৈরি হয়। এটা ওই এলাকায় আরও কয়েকটি বাঁধের একটি। খনি থেকে আহৃত ধাতুর তলানি রাখা হতো ওই বাঁধে।

দুর্ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টারে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ছবি: রয়টার্স

ভ্যালের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বাঁধটির ধারণক্ষমতা ১২ মিলিয়ন ঘনমিটার। তবে তিন বছর ধরে বাঁধটি অকার্যকর অবস্থায় ছিল। বাঁধ ভেঙে কী পরিমাণ বর্জ্য নির্গত হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।