মেক্সিকোতে মাদকবিরোধী যুদ্ধে গুম ৬০ হাজার

মেক্সিকোতে ২০০৬ সালে মাদকবিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ গুম হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
মেক্সিকোতে ২০০৬ সালে মাদকবিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ গুম হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

মেক্সিকোতে ২০০৬ সালে মাদকবিরোধী যুদ্ধ শুরু হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ গুম হয়েছে। এ ছাড়া গত এক বছরে দেশটিতে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ খুন হয়েছে। এ সংখ্যা সরকারের পূর্বধারণার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি।

মেক্সিকোর ন্যাশনাল সার্চ কমিশনের প্রধান কারলা কুইনতানা গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস মানুয়েল লোপেস অব্রাদোর সরকারের বছর পূর্তির মাথায় এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হলো। গত বছরের জুনে এ সরকার নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা ৪০ হাজারের মতো হবে বলে জানিয়েছিল।

মেক্সিকোর নিরাপত্তা বাহিনী এসব হত্যা ও গুমের জন্য সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র ও মাদক চোরাকারবারিদের দায়ী করেছে। কুইনতানা জানিয়েছেন, এসব ব্যক্তির মধ্যে ৫৩ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ পুরুষ।

মেক্সিকোর ন্যাশনাল সার্চ কমিশন জানিয়েছে, দেশের ৩১টি রাজ্যের মধ্যে মাত্র তিনটি রাজ্যে এসব গণকবর পাওয়া গেছে। রাজ্যগুলো হলো উত্তরাঞ্চলীয় সিনালোয়া, মেক্সিকো উপসাগরীয় রাজ্য ভেরাক্রুস এবং প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় রাজ্য কলিমা।

মেক্সিকোতে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের হিসাব রাখা শুরু হয়েছে ১৯৬৪ সাল থেকে। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত ৬১ হাজার ৬৭৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছে ২০০৬ সাল থেকে। কারণ, ওই বছর দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিপ কালদেরন মাদকের সামরিক অভিযান শুরু করেন।

মেক্সিকোর নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা ও গুমের জন্য সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র ও মাদক চোরাকারবারিদের দায়ী করেছে। ছবি: সংগৃহীত

তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সহিংসতা দমনে কঠোরতার নীতি অবলম্বনের পক্ষপাতি নন। তিনি ‘বুলেট নয়, বুকে টেনে নেওয়ার’ নীতিতে সহিংসতা নিরসনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বৈষম্য ও দুর্নীতি রোধের ওপরও জোর দিচ্ছেন। তবে তারপরও মাদক সহিংসতায় নিহত মানুষের সংখ্যা কমছে না। ২০১৯ সালে মেক্সিকোতে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ খুন হয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ফেলিপের আমলে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সংকটের আর সমাধান হয়নি। এমনকি এরপর আরও দুজন প্রেসিডেন্ট হলেও মেক্সিকোতে সেই সংকট রয়েই গেছে।

কারলা কুইনতানা বলেন, গত বছর পাঁচ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। এই তথ্য ভয়ংকর। কারণ, প্রতিটি নিখোঁজের পেছনে ভুক্তভোগী পরিবারের যন্ত্রণার গল্প লুকিয়ে আছে।

গত বছরের জুনে দেশটির সরকার নিখোঁজ মানুষের সংখ্যা ৪০ হাজারের মতো হবে বলে জানিয়েছিল। ছবি: এএফপি

মেক্সিকোর এই গুমের ঘটনা লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তথ্য অনুসারে, গুয়াতেমালার ৩৬ বছরের গৃহযুদ্ধে নিখোঁজ হয়েছিল ৪০ হাজার মানুষ। আর ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় সামরিক শাসনামলে গুম হয় ৩০ হাজার মানুষ। তথ্যসূত্র: বিবিসি ও আল–জাজিরা