করোনাভাইরাসের টিকা এলে বিনা মূল্যে প্রবেশাধিকারের জন্য জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছেন লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর নেতারা। বিশ্বের সব দেশের সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী দেশগুলোকে টিকা–সম্পর্কিত তথ্য ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানান নেতারা।
লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেশি। সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপির হিসাবে এ পর্যন্ত লাতিন আমেরিকায় ৯০ লাখ মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ বলেন, মহামারি ও দারিদ্র্যের কারণে কেউ নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না। তিনি করোনাভাইরাসের টিকা ‘বিশ্বের সবার সুরক্ষার জন্য’ ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
করোনার টিকাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শত্রুতার কথা উল্লেখ করেন চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা। তিনি বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে বিরোধ মেটাতে আহ্বান জানান। মহামারি ও বিশ্বব্যাপী চলা মন্দার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতেও আহ্বান জানান।
সেবাস্তিয়ান পিনেরা আরও বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন দেশকে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান–প্রদান করতে হবে। সীমান্ত খোলা বা বন্ধের বিষয়ে সমন্বয়, কার্যকর ও নিরাপদ টিকার উন্নয়ন ও সহজলভ্যতার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিশ্বে করোনার বেশ কয়েকটি টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে ১১টি টিকা নিয়ে গবেষণা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে রয়েছে।
টিকা নিয়ে গবেষণার তথ্য বিনিময় করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মে মাসের শেষ দিকে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।
তবে জাতিসংঘ পরিষদ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, জাতিসংঘ চীনের হয়ে কাজ করছে। টিকা ভাগাভাগির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির অভিযোগ, অন্যরা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরির চেষ্টা করছে।
সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গৃহীত ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে নেই রাশিয়া ও চীন। কোভ্যাক্সের উল্লেখ করে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মরেনো বলেন, এভাবেই টিকাগুলো পেটেন্ট ছাড়া বিতরণ করা যায়। বিশেষ করে দুর্বল দেশগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া যায়।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া বক্তব্যে লাতিন আমেরিকার নেতারা সুদমুক্ত ঋণের সুবিধা দিতে আহ্বান জানান। স্বাস্থ্যসংকটের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা সামলাতে তাঁরা এ আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের একটি প্রকল্পের তথ্য অনুসারে, করোনা মহামারির কারণে সাড়ে চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ৩ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার ১৪৫। করোনায় বিশ্বে মোট মারা গেছেন ৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৪৬ জন।