প্রায় দেড় মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে স্থানীয় সময় গত বুধবার লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বামপন্থী পেদ্রো কাস্তিলিও। শুক্রবার তিনি ঘোষণা করেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম। এর এক দিনের মাথায় নতুন সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে দেশটির জনতা। বিক্ষোভ হয়েছে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদ গুইদো বেলিডোর নিয়োগের প্রতিবাদে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনে রোববার বলা হয়েছে, পেরুর রাজধানী লিমার রাজপথে স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে শত শত মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ সময় তাঁরা প্রেসিডেন্ট পেদ্রো ও প্রধানমন্ত্রী বেলিডোর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন। বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ, কখনোই চাই না।’ অনেকে ‘সমাজতন্ত্রকে না বলুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কট্টরপন্থী বেলিডো একজন সন্ত্রাসী। গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকে পেরুতে ক্ষমতা দখলের জন্য সশস্ত্র লড়াই করেছিল বামপন্থী গেরিলা সংগঠন ‘শাইনিং পাথ’। এই সংগঠনের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে পেরুতে ১০ হাজারের মতো সাধারণ মানুষ জীবন হারিয়েছে। এই সংগঠনের প্রতি সহানুভূতিশীল কট্টর বামপন্থী বেলিডো। প্রশ্নবিদ্ধ রাজনৈতিক অবস্থান থাকার পরও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় পেরুতে আবারও সন্ত্রাসের রাজ্য কায়েম হতে পারে। তাই বিক্ষোভকারীরা দেশটির সরকারে সন্ত্রাসবাদের সমর্থক ও প্রশ্নবিদ্ধ কোনো মুখ দেখতে চান না।
গত ৬ জুন পেরুতে দ্বিতীয় দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে পেদ্রোর প্রতিপক্ষ ছিলেন ডানপন্থী কিকো ফুজিমোরি। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিলেন কিকো। তাই অভিযোগ পর্যালোচনা শেষে বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে প্রায় দেড় মাস সময় লেগে যায়। চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, নির্বাচনে পেদ্রো ৫০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পান। কিকো পান ৪৯ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। কিকোকে ৪৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন পেদ্রো।
সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান পেদ্রো। পেশাজীবনে ছিলেন স্কুলের শিক্ষক। সেখান থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। পেরুর গ্রামীণ দরিদ্র ভোটারদের সমর্থনেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তাই তাঁর এই বিজয় দেশটির রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক এলিটদের বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে।
অন্যদিকে নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেলিডো দেশটির কুজকো আন্দিয়ান শহরের কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদ। তিনি রাজধানী লিমায় খুব বেশি পরিচিত নন। বেলিডো রাজনৈতিক দল ফ্রি পেরু পার্টির সদস্য। নিয়োগ পেয়ে বেলিডো টুইটারে বলেন, ‘পেদ্রোকে আমরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নীতির জন্য পূর্ণ সমর্থন জানাই। আমরা দেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করব।’